মনজুর এ আজিজ : ধলেশ্বরী ও শীতালক্ষ্যা নদীর মোহনায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও নির্বিচারে নদী দখলের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রোববার (১ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শাহ সিমেন্টকে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মীরেরশরাই মৌজায় প্রায় ২৪ একর নদীর জমি বালু ও মাটি ফেলে ভরাট করেছে শাহ সিমেন্ট কোম্পানি। এতে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে শ্রেণি পরিবর্তনের শিকার হয়েছে। দখলকৃত স্থাপনাগুলো ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানিপ্রবাহে সরাসরি বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। এছাড়া কারখানার তরল ও কঠিন বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লিংকার ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে নদীতে মিশে জলদূষণ ঘটাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নদী দখল করে দুটি নদী ধ্বংসের এই কার্যক্রম কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না। এটি দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য ও নদী-নির্ভর জনজীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে হাইকোর্ট বাংলাদেশের সব নদীকে আইনি সত্তা বা জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে নদী ধ্বংস মানে ব্যক্তি হত্যার শামিল। শাহ সিমেন্ট যে দখলদারত্ব করছে, তা ভয়াবহ এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে এ প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার সুযোগ নেই।
টিআইবি মনে করে, শাহ সিমেন্টকে সরকারি সব কার্যাদেশ, লাইসেন্স ও আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ব্যবসায়িকভাবে বয়কটের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
টিআইবি জানিয়েছে, শাহ সিমেন্টের কার্যক্রম ‘পোর্ট অ্যাক্ট, ১৯০৮’ ‘পোর্ট রুলস, ১৯৬৬’ এবং উচ্চ আদালতের আদেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রতিষ্ঠানটিকে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন (এনআরসিসি) ও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ‘দখলদার’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
টিআইবির দাবিগুলো হলো- শাহ সিমেন্টকে অবিলম্বে কালো তালিকাভুক্ত করা, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদী উদ্ধার, পরিবেশের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়, দায়ীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে নদী দখল ঠেকাতে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা।
ড. জামান বলেন, একটি দায়িত্বশীল ও বৈষম্যবিরোধী রাষ্ট্রের কাঠামোয় এই দখলদারত্বের কোনো স্থান নেই। নদী রক্ষায় অবিলম্বে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।