শিরোনাম
◈ বিশ্বজুড়ে ফের কভিড আতঙ্ক: নতুন ভ্যারিয়েন্ট ‘এক্সইসি’ ছড়াচ্ছে দ্রুত ◈ লামিন ইয়ামালের রেকর্ড মূল্যে বার্সার সঙ্গে চুক্তি ◈ আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা চরমোনাই পীরের ◈ রাবিতে ছাত্রজোট ও শাহবাগবিরোধী শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ (ভিডিও) ◈ চাকরিজীবীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার? ◈ সচিব পদে বড় রদবদল ◈ মোহাম্মদপুরের ত্রাস এক্সেল বাবু গ্রেপ্তার ◈ সৌদি আরবে ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা ◈ সরকার ও রাজনৈতিকদলগুলো দুই মেরুতে, কোন দিকে যাচ্ছে ক্ষমতার রাজনীতি ◈ প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,  ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার ঘোষণা আসবে  প্রত্যাশা করছি

প্রকাশিত : ২৭ মে, ২০২৫, ০৮:১২ রাত
আপডেট : ২৮ মে, ২০২৫, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সংকট নিরসনে কমিটি গঠনসহ নানা উদ্যোগ সরকারের

মনজুর এ আজিজ: পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানে আহ্বায়ক কমিটি গঠনসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে  সরকার। মঙ্গলবার (২৭ মে) এক বার্তায় এ তথ্য জানায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

বার্তায় জানানো হয়, সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, পল্লী বিদ্যুৎ সংস্কার বিষয়টিকে অজুহাত হিসেবে সামনে এনে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কিছু কর্মচারী দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ সংক্রান্ত তথাকথিত বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন নামক অনিবন্ধিত একটি সংগঠনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি সরকারের গোচরীভূত হয়েছে। এরূপ সংগঠন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোনো বৈধ সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশব্যাপী নিয়োজিত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিবেদিত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে এ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রাহক তাদের আওতায়। সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ ও শাস্তিমূলক বদলীর আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

গত ১৭ অক্টোবর দেশের ৬৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন নেতৃবৃন্দ। তখন নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ শাটডাউন করার বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল না। সকালে নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাকে আটক করলে ক্ষুব্ধ অফিসাররা স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এরপর মামলা ও ২০ জন কর্মকর্তাকে অব্যাহতির খবর ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়ভাবে সমিতির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এরপর কিছুদিন আন্দোলন বন্ধ থাকলেও ফের আন্দোলনে নেমেছে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

সরকার এই আন্দোলনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য নিম্নবর্ণিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে : ১. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভূমিকা ও কাঠামোগত সংস্কারের জন্য সরকার ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটির আগেই সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে এ কমিটি একটি উপস্থাপনার মাধ্যমে রিপোর্ট চূড়ান্ত করবে এবং রিপোর্ট প্রাপ্তির পর সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। 

২. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীদের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মচারীদের পদমর্যাদার বিষয়টি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি কাজ করছে এবং আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সহকর্মীসুলভ আচরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

৩. শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির যেসকল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা নাশকতামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত নয় তাদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থা পুনঃবিবেচনা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। 

৪. পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর ক্রয়, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে এরূপ কর্মকর্তাগণের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৫. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় পদে কর্মরত কর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ ও জরুরি সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এরূপ ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিযুক্ত হতে নির্দিষ্ট বয়সসীমা এবং শারীরিক সক্ষমতা রক্ষা করতে হয়। উক্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য তারা বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন অনুযায়ী বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের শ্রম আইনটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) দ্বারা স্বীকৃত।

৬. বিগত আগস্ট ২০২৪ হতে অদ্যাবধি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের মধ্যে ৬০২৫ জনকে নিয়মিত করা হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে চলমান রয়েছে।

৭. কর্মচারীদের বদলি একটি নিয়মিত কার্যক্রম। যে কোনো কর্মচারী কোনো একটি কর্মস্থলে ৩ বছর অতিক্রান্ত হলেই তিনি বদলিযোগ্য হবেন এবং এটি একটি স্বাভাবিক চর্চা। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মী পর্যায়ের বদলি সমিতির নিজস্ব প্রক্রিয়াতেই করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি, মানবিক দিক বিবেচনা করে যেসব কর্মচারী স্বামী- স্ত্রী হয়েও ভিন্ন ভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত ছিলেন এরূপ ৩০৭৯ জন কর্মচারী দম্পতিকে সম্প্রতি একই কর্মস্থলে বদলি করা হয়েছে। তাছাড়া সংযুক্ত কর্মচারীদের বেলায় অদ্যাবধি ৬ জন কর্মীকে তার স্ব-স্ব কর্মস্থলে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং বাকিদের বিষয়টিও বিবেচনাধীন রয়েছে।

৮. পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কতিপয় কর্মচারীর বিরুদ্ধে যে সব মামলা দায়ের করা হয়েছে, উক্ত মামলাসমূহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং তা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। অভিযোগ বিবেচনা ও বিচারের ক্ষেত্রে আদালত স্বাধীন এবং অভিযুক্ত কর্মচারীরা আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারে।

সরকার আশা করে, গৃহীত ব্যবস্থাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনকারী কর্মচারীরা তাদের রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতা থেকে এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আন্দোলন প্রত্যাহার করে স্ব-স্ব কর্মস্থলে ফেরত যাবে এবং অহেতুক সভা সমাবেশ থেকে বিরত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়