শিরোনাম
◈ ওসমান হাদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেভাবে জরুরি হয়ে উঠেছিলেন ◈ সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ ও মেয়রের বাড়িতে আগুন ◈ হাদির হত্যাকাণ্ড রাজনীতিতে ভয়াবহ মোড়ের ইঙ্গিত: আলজাজিরার বিশ্লেষণ ◈ পা‌কিস্তা‌নের কা‌ছে পরা‌জিত হ‌য়ে যুব এ‌শিয়া কা‌পের সেমিফাইনাল থে‌কে বাংলাদেশের বিদায় ◈ বাংলাদেশ ইস্যুতে সংলাপ বজায় রাখার সুপারিশ, হাসিনার রাজনৈতিক ভূমিকা নয়: ভারত ◈ শহীদ ওসমান হাদির জানাজাকে ঘিরে ৭ নির্দেশনা ডিএমপির ◈ গভীর রাতে নদী ও ইটভাটায় চলে প্রশিক্ষণ, চার বিভাগে সক্রিয় শুটার নেটওয়ার্ক ◈ হাদি হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত, ঢাকায় বিজিবি মোতায়েন, বিদেশি নাগরিকদের বিশেষ সতর্কতা ◈ সুদানে ড্রোন হামলায় শহীদ ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছাবে শনিবার ◈ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যায় জাতিসংঘের উদ্বেগ, দ্রুত তদন্ত ও ন্যায়বিচারের আহ্বান

প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৪১ রাত
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গভীর রাতে নদী ও ইটভাটায় চলে প্রশিক্ষণ, চার বিভাগে সক্রিয় শুটার নেটওয়ার্ক

নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানীর বাইরে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রধারী পেশাদার শুটারদের একাধিক গ্রুপ। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও নারায়ণগঞ্জ—এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে নির্বাচনকে ঘিরে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন শুটার সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা সূত্র। ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার, প্রতিপক্ষকে ভয় দেখানো এবং প্রয়োজনে টার্গেট কিলিংয়ের প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই গভীর রাতে নদীর মাঝখানে নৌকায় বসে কিংবা পরিত্যক্ত ইটভাটায় আগ্নেয়াস্ত্র চালনার গোপন প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে এসব গ্রুপ। সূত্র: ইনকিলাব প্রতিবেদন

অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, শুটারদের তৎপরতা ততই সুসংগঠিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আগের নিষ্ক্রিয় বা আত্মগোপনে থাকা শুটারদের আবার যোগাযোগ করে মাঠে নামানো হচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মী, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং অপরাধী গডফাদারদের মাধ্যমে এই যোগাযোগ স্থাপন হচ্ছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর চরাঞ্চল ও পতেঙ্গা এলাকার নির্জন জায়গাগুলোকে ব্যবহার করছে অন্তত পাঁচজন শুটারের একটি গ্রুপ। স্থানীয় জেলেদের বরাতে জানা গেছে, গভীর রাতে নৌকার ইঞ্জিনের শব্দের সঙ্গে মাঝেমধ্যে গুলির মতো শব্দ শোনা যায়। তবে নির্বাচনের উত্তাপ ও ভয়ের কারণে কেউই প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে সাহস পান না। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এই গ্রুপটি নির্বাচনের আগে ‘ভয় দেখানোর’ কাজের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

খুলনায় রূপসা ও ভৈরব নদীসংলগ্ন এলাকা এবং পরিত্যক্ত ইটভাটাগুলো শুটারদের গোপন প্রশিক্ষণের নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানে সক্রিয় অন্তত চারজন শুটার আগে মাদক কারবার ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল। নির্বাচনের আগে তারা আবার সংগঠিত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় নিয়মিত অনুশীলন করছে।

রাজশাহীতে পরিস্থিতি আরও স্পর্শকাতর। সীমান্তঘেঁষা এই অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্রের সহজ প্রবাহ শুটারদের শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। পদ্মা নদীর চর, ফাঁকা কৃষিজমি ও বন্ধ ইটভাটায় গভীর রাতে গুলি চালনার অনুশীলনের তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখানে অন্তত তিন থেকে চারজন শুটার রয়েছে, যারা প্রয়োজন হলে ঢাকাসহ অন্য জেলায় গিয়ে নির্বাচনী সহিংসতায় ব্যবহৃত হতে পারে বলে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা।

নারায়ণগঞ্জে শুটার নেটওয়ার্কের সঙ্গে গ্যাং কালচার ও রাজনৈতিক প্রভাবের সরাসরি সংযোগ পাওয়া গেছে। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী এলাকা ও বন্ধ ইট ভাটাগুলোতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের তথ্য রয়েছে পুলিশের হাতে। এখানকার শুটারদের অনেকেই একাধিক মামলার আসামি হলেও জামিনে মুক্ত থেকে আত্মগোপনে রয়েছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শুটারদের এই প্রশিক্ষণ কোনো এলোমেলো কর্মকাণ্ড নয়। নির্বাচন সামনে রেখে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্যই এই প্রস্তুতি। খুব কাছ থেকে নিখুঁত নিশানা, দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ, অস্ত্র লুকানো ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার কৌশল—এসব বিষয়েই অনুশীলন করছে তারা। নির্দিষ্ট কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র না রেখে বারবার জায়গা বদলানো হচ্ছে, যাতে পুলিশের নজর এড়ানো যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, নির্বাচন এলেই শুটারদের ব্যবহার বাড়ে। কারণ প্রকাশ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি না নিয়ে কম সময়ে বড় প্রভাব ফেলতে পেশাদার শুটার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ভোটের সময় বন্দুকধারী শুটার মানেই বড় ঝুঁকি। তারা দৃশ্যমান না থাকলেও নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করার সক্ষমতা রাখে।”

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্রধারী ও পেশাদার অপরাধীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক চাপ, স্থানীয় আশ্রয়দাতা এবং জামিন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে শুটারদের অনেকেই আইনের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই শুটার গ্রুপগুলোর সক্রিয়তা শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্যও বড় হুমকি। সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, শুটারদের ধরপাকড়ের পাশাপাশি তাদের অর্থদাতা, আশ্রয়দাতা এবং রাজনৈতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা গেলে নির্বাচনী সহিংসতার ঝুঁকি থেকেই যাবে।

নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, চার বিভাগে শুটার গ্রুপগুলোর এই নীরব কিন্তু সুসংগঠিত প্রস্তুতি দেশের নির্বাচন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সামনে ক্রমেই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়