শিরোনাম
◈ সকালে পাকিস্তানও কেঁপেছে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্পে ◈ ভূমিকম্পে ঢাকার বংশালে বিল্ডিংয়ের রেলিং ভেঙে পড়ে নিহত অন্তত ৩ ◈ ভূমিকম্পে ঢাকায় আরমানীটোলায় ভবন ধস, হেলে পড়েছে কলাবাগান, মাতুয়াইল ও নিউমার্কেটের পাশের একটি ভবন ◈ 'এখনই তত্ত্বাবধায়ক' দাবি থেকে কেন সরে এলো বিএনপি ও জামায়াত? ◈ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো কলকাতাও ◈ আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামীর বিরুদ্ধে দিল্লির আদালতে চার্জশিট জমা ◈ হামজা চৌধুরীর অভিনন্দন বার্তা পে‌য়ে বিস্মিত মুশফিকুর র‌হিম ◈ ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প ◈ ভারত–বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ: দুই দিনের বৈঠকে ‘ইতিবাচক বার্তা’ ◈ পেশাগত নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কর্মক্ষেত্র নিরাপত্তায় বৈপ্লবিক অগ্রগতি—আইএলওর ১০টি মৌলিক দলিল অনুমোদন করলো বাংলাদেশ

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ০২:৫৫ দুপুর
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পুরান ঢাকায় গুলিতে নিহত তারিক সাঈদ মামুন

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব, হত্যার পেছনে আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন ইমনের নাম উঠে এসেছে

পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২৪ বছর কারাভোগের পর ২০২৩ সালের জুন মাসের দিকে জামিনে কারামুক্ত হন মামুন। এর পর থেকেই তাকে হত্যার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিলেন ইমন। এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইমন কেন বিরাগভাজন হলেন? কেন মামুনকে হত্যার জন্য বারবার টার্গেট করেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করা হয় মামুনের সঙ্গে। আমাদের সময়ের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা সিটি কলেজের এক সময়ের মেধাবী শিক্ষার্থী মামুন ঢাকার অপরাধজগতে প্রবেশ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় তুলে ধরেন।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় গতকাল সোমবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাঈদ মামুন ওরফে তারিক সাইফ মামুন। এ হত্যার ঘটনায় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নাম আসছে। তার নির্দেশেই মামুনকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তেজগাঁও বিজি প্রেস এলাকায় মামুনকে হত্যার জন্য চারটি মোটরসাইকেলে আসা ৭-৮ জন অস্ত্রধারী তাকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। সেই গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে মামুন দৌড়ে প্রাণ রক্ষা করেন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান ওই রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেলে যাওয়া অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র শীল। কিন্তু গতকাল আর প্রাণে বাঁচতে পারেননি তারিক সাঈদ মামুন।

আলাপকালে মামুন বলেছিলেন, ইমনই আমাকে সন্ত্রাসী বানিয়েছে। আমাকে অপরাধের হাতেখড়ি দিয়েছে। ৮৭-৮৮ সালের কথা। আমি সিটি কলেজে পড়তাম। কলেজে পড়ার সময়ই ইমনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। বন্ধুত্ব। তারপর ইমনই আমাকে সন্ত্রাসী জীবনে নিয়ে এসেছে। এর পর অনেকবার চেষ্টা করেছি এ জগৎ থেকে ফিরে আসতে। কিন্তু ইমন আমাকে ফিরতে দেয়নি। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার কথা বললেই আমাকে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার অপরাধজগতে বেঁধে রাখে। যে কারণে অনেক চেষ্টার পরও আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি। এমনকি আমাকে তার সঙ্গে রাখতে একের পর এক মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমি অনেক ঘটনায় খুন না করেও খুনের মামলার আসামি হয়েছি।

এমন প্রশ্নের জবাবে মামুন তখন বলেছিলেন, ‘২০০২ সালে সব মামলায় জামিন পাওয়ার পরও হাইকোর্ট থেকে ইমন স্থগিতাদেশ করানোয় আমি কারাগার থেকে বের হতে পারিনি। মুক্ত হয়ে আমার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা মেনে নিতে পারেনি ইমন। আমি সব মামলায় জামিন পাওয়ার পর থেকে কারাগারেই সে প্রায়শই হুমকি দিত, বের হলে আমাকে মেরে ফেলবে। সেই ক্ষোভ থেকেই আমাকে মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা করছে। আমি তো সন্ত্রাসী হয়ে জন্ম নেইনি। আমাকে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে। সারা জীবন আমাকে ব্যবহার করে গেছে সে। আর এখন আমাকে একেবারে মেরেই ফেলতে চাইছে।’

মামুন আমাদের সময়কে আরও বলেন, ১৯৯৮ সালে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের পর ইমন ও আমি পুলিশের খাতায় মোস্ট ওয়ান্টেড হয়ে যাই। আমাদের দুজনকে ধরার জন্য পুলিশ একের পর এক অভিযান শুরু করে। ১৯৯৯ সালে একটি ভুলের কারণে আমাকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হতে হয়। ইমন পালিয়ে যায় ভারতে। এর পর আমার জেলজীবন শুরু হয়। একের পর এক মামলায় জড়িয়ে আর বেরোতে পারিনি। ২০০৮ সালের দিকে ইমনকে ভারত থেকে ফেরত আনার পর আবার জেলখানায় আমাদের দেখা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মামুন আরও বলেছিলেন, ‘জেলখানায় যাওয়ার পর আমার স্ত্রী স্বপ্না আমাকে ছেড়ে যায়। সিটি কলেজে পড়াকালে ইমনের সঙ্গে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব। আমি এইচএসসিতে প্রথম বিভাগে পাস করেছি। এর পর সিঙ্গাপুরে কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হই। ওই সময়ে ইমনের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। পড়াশোনা করে দেশে ফিরে আসার পর বন্ধুদের রিইউনিয়নে আবার ইমনের সঙ্গে দেখা হয়। আমরা এক হই। আমার শিক্ষাজীবন ভালোভাবে শেষ করলেও এই ইমনের কারণে সংসারজীবন নষ্ট হয়ে গেছে। তার কারণে অপরাধ না করেও আমি মামলার আসামি হয়েছি। প্রায় অর্ধেক জীবন কারাগারে কাটাতে হয়েছে। আমার চিন্তায় বাবা-মা ঠিকমতো দুই চোখের পাতা এক করতে পারেননি। আমার বাবা এখন শয্যাশায়ী। তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি।’

‘চেয়েছিলাম জেলখানা থেকে বেরিয়ে তাদের সেবা করেই বাকি জীবনটা কাটাব। কিন্তু ইমন আমাকে সে সুযোগও দিতে চায় না। আমাকে মেরে ফেলতে চায়। অথচ সারাজীবন তার কথামতো ব্যবহার হয়েছি। অনেক অপরাধ না করেও মামলার আসামি হয়েছি। চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডে আমি জড়িত ছিলাম না; কিন্তু ইমনের কারণে আমি সেই মামলাতেও আসামি হয়েছি। মোট কথা, ইমন কোনো মামলার আসামি হলে সেই মামলাতে পুলিশ আমাকেও আসামি করেছে। ও চায় আমি আবার চাঁদাবাজি করে তাকে টাকা দেই। কিন্তু আমি আর ভুল করতে চাই না। ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চাই। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসতে চাই। ২৪টি বছর তো জীবন থেকে ঝরে গেছে। আর এই জীবনকে নষ্ট হতে দেব না।’ সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়