ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অসংখ্য হোটেল ও রেস্তোরাঁ এখন ভয়ংকর মাদক বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। খাবারের ব্যবসার আড়ালে এসব স্থানে মূলত পরিবহন চালকদের লক্ষ্য করে ইয়াবা, গাঁজা এবং ফেন্সিডিলের মতো মাদক বিক্রি হচ্ছে। একাত্তর টিভির এক বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই সিন্ডিকেটের ভয়াবহ চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, যা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে।
অনুসন্ধানের বিবরণ:
একাত্তর টিভির অনুসন্ধানী দল ছদ্মবেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বিভিন্ন হোটেলে অভিযান চালায়। প্রতিবেদনে দেখা যায়:
সহজলভ্য মাদক: হোটেলগুলোতে অত্যন্ত সহজেই মাদক পাওয়া যায়। একজন বিক্রেতাকে মাদক বিক্রির সময় হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করা হলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান।
চালকদের টার্গেট: এই ব্যবসার মূল ক্রেতা ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও বাসের চালক ও সহকারীরা। দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তি দূর করতে বা জেগে থাকতে তারা মাদক সেবন করে, যা মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করে।
গোপন আস্তানা: অনেক হোটেলের পেছনে মাদক সেবনের জন্য আলাদাভাবে টিনের ঘর বা কেবিন তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘরে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়।
অকপট স্বীকারোক্তি: এক হোটেল ব্যবস্থাপক স্বীকার করেন যে, মাদক না রাখলে চালকরা তাদের হোটেলে গাড়ি থামায় না। ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে তিনি জানান। অন্য আরেক চালক জানান, প্রায় সব হোটেলেই কম-বেশি মাদক পাওয়া যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায়: বিস্ময়করভাবে, কিছু মাদক বিক্রির আখড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির খুব কাছেই অবস্থিত। একজন হোটেল মালিক দাবি করেন, থানা তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় তার কোনো ভয় নেই।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য:
মহাসড়কে এই ভয়ংকর মাদক ব্যবসা নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশ: তাদের দাবি, তারা মূলত সড়কের যানজট নিরসনে কাজ করে এবং এভাবে মাদক বিক্রির বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর: অধিদপ্তরের পরিচালক মো. তানভীর মমতাজ জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তারা অবগত এবং এ নিয়ে তাদের গোয়েন্দা দল কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, মহাসড়কের হোটেল মালিকদের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
উপসংহার:
প্রতিদিন যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, সেখানে চালকদের হাতে মাদক তুলে দেওয়ার এই ভয়ংকর চক্র সড়ক নিরাপত্তাকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। উৎস: একাত্তর টিভি।