মাহবুব হোসেন সারমাত,গোপালগঞ্জ: বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাবার পথে স্বামী-স্ত্রী ও মেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এতে পরিবার ও স্বজনদের মাঝে শেকের ছায়া নেমে এসেছে। ঢাকা খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতী বাসস্ট্যান্ডে ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী ও মেয়ে সহ ৪ জন নিহত হয়।
নিহতরা হলেন, মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার উত্তর রমজানপুর গ্রামের মোতালেব পাইক (৭০), তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম (৬০), মেয়ে রুমা খানম (৩৫) ও ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে ঘের ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমান শেখ (৪৮)।
মোতালেব পাইক, স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম, মেয়ে রুমা খানম ও রুমা খানমের মেয়ে নুসরাত(৯)কে নিয়ে ইজিবাইকে করে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার ফলিয়া গ্রামে জামাতা হামিদুল ইসলাম মোল্লার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ওই গ্রামে আগামী বুধবার (১ অক্টোবর) জামাতার মেয়ে নাভিলা আক্তার নীলার বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মোতালেব পাইকের জামাতা হামিদুল ইসলাম মোল্লা বলেন, আমার মেয়ে নাভিলা আক্তার নীলার বিয়েতে অংশ নিতে আমার শ্বশুর মোতালেব পাইক, শাশুড়ি দেলোয়ারা বেগম, শালিকা রুমা ও তার মেয়ে আহত নুসরাত আমার বাড়ীতে আসছিলেন। পথিমধ্যে গোপালগঞ্জের মাঝিগাতীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শ্বশুর, শাশুড়ি ও শালিকা প্রাণ হারায়। শালিকার মেয়ে নুসরাত জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার হেলথ কেয়ারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থা আশঙ্কজনক। এখন ৩টি পরিবার সহ স্বজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট রাসেল মিয়া জানান, শনিবার দুপুর ১২ টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার মাঝিগাতী বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ইজি বাইকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ইজি বাইকে থাকা পাচ যাত্রী মারাত্মক আহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ও স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবাল খান ইজিবাইক যাত্রী মোতালেব পাইক ও তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে মারাত্মক আহত অপর ৩ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক আফতাব জিলানী নিহত মোতালেব পাইকের মেয়ে রুমা খানম ও ঘের ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমান শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি মারাত্মক আহত রুমা খানমের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে নুসরাতের (৯) অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার হেলথ কেয়ারে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান ওই কর্মকর্তা ।
ট্রাফিক সার্জেন্ট রাসেল মিয়া জানান, নিহত মোতালেব পাইক তার স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম, মেয়ে রুমা খানম এবং ওবায়দুর শেখের মরদেহ আবেদনের প্রেক্ষিতে শনিবার বিকেলে বিনা ময়না তদন্তে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইজিবাইক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় কবলিত বাস ও ইজিবাইক জব্দ করা হয়েছে।
অন্যদিকে আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গোপালগঞ্জে বাসের ধাক্কায় পথচারী গাজী মো. হাফিজুর রহমান টিটো (৫২) নিহত হয়েছেন।
নিহত টিটো গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ডুমদিয়া গ্রামের মোঃ লুৎফর রহমান ওরফে মন্টু গাজীর ছেলে। জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশের এসআই মোঃ রোমান মোল্লা জানান, এ দিন বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা খুলনা মহাসড়কের সদর উপজেলার ডুমদিয়া নামক স্থানে ওয়েলকাম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস পথচারী গাজী মো. হাফিজুর রহমান টিটোকে ধাক্কা দেয়। সংকটজনক অবস্থায় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিহত পথচারী গাজী মো. হাফিজুর রহমান টিটোর মরদেহ বিনা ময়না তদন্তে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, শনিবার দুপুরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গ্যাড়াখোলা ব্রিজের কাছে প্রাইভেটকার ও ব্যাটারিচালিত অটোভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ভ্যানচালক খোকন শেখ গুরুতর আহত হন। তাকে মুকসুদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহত খোকন শেখের বাড়ি কাশিয়ানী উপজেলার মাজরা গ্রামে।