মোঃ জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের রাজঘাট ইউনিয়নের বর্মাছড়া চা বাগানে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিজন উপকারভোগীর প্রাপ্য ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে দেওয়া হচ্ছে ২৬ থেকে ২৮ কেজি চাল। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ বলছেন—“প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নিয়ে পেট ভরাচ্ছে দুর্নীতিবাজ ডিলার।” বিষয়টি নিয়ে চা-শ্রমিকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রকাশ ভৌমিক নামের এক ডিলারের মাধ্যমে ইউনিয়নের ৩টি ওয়ার্ডের মোট ৪৮২ জন উপকারভোগীর মধ্যে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ করা হয়। তবে গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সকালে সরেজমিনে কয়েকজন উপকারভোগীর বস্তা ওজনে দেখা যায়, চালের বস্তায় ওজনে কারচুপি স্পষ্ট। কেউ পাচ্ছেন ২৮ কেজি, আবার কেউ ২৬ কেজি চাল। অথচ প্রত্যেককে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা।
চাল বিতরণের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসের সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার উপকারভোগীরা চাল পাওয়ার কথা। কিন্তু ডিলার নিয়ম ভেঙে একদিন আগে, রবিবার থেকেই চাল বিতরণ শুরু করেন। এ ঘটনায় উপকারভোগীরা অভিযোগ করে বলেন-ডিলার ও সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশে চালের ওজনে নিয়মিত কারচুপি এমন অনিয়ম চলছে। প্রতি মাসে ডিলার নিয়মিতভাবেই চাল কম দেন। তারা বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, সরকারের দেওয়া চালেই সংসার চলে। অথচ যখন চাল নিতে যাই, দেখি প্রাপ্যের চেয়ে কম পাই। এটা খুবই অন্যায়। সরকার ৩০ কেজি চাল দেয়, কিন্তু ডিলার ২–৪ কেজি কমিয়ে আমাদের ঠকায়।”
এতে সরকারি সুবিধার কথা শুনে লাইনে দাঁড়ানো হতদরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের প্রাপ্য খাদ্য সহায়তা থেকে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হতদরিদ্র পরিবারগুলো। অথচ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ৩০ কেজি চাল দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।
অভিযুক্ত ডিলার প্রকাশ ভৌমিক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “সরকারি গুদাম থেকে ৫০ কেজির বস্তায় ২ কেজি করে কম (ঘটতি) থাকায় আমি উপকারভোগীদের ২৮ কেজি করে দিয়েছি।”
তবে তার এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ উপকারভোগীরা বলেন, “বস্তায় ঘাটতি থাকলেও তার দায় আমাদের নয়। সরকার আমাদের ৩০ কেজি দেওয়ার নিয়ম করেছে। তাহলে কেন আমরা ২–৪ কেজি কম পাব?”
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা দীপক কুমার মন্ডল স্পষ্ট করে বলেন, “খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীরা অবশ্যই ৩০ কেজি করেই চাল পাবেন। এখানে ওজনে ঘাটতি থাকার কথা বলে চাল কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি, ২৮ কেজি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গুরুতর অনিয়মের মধ্যে পড়ে, এজন্য ডিলারের ডিলারশিপ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে একই ডিলারের বিরুদ্ধে ওজনে কারচুপি চলছে; তবুও এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এ ধরনের অনিয়ম দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ন্যায্য অধিকার হরণ করছে। তাই তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত, স্বচ্ছ তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ—শুধু ডিলারকে শাস্তি দিলে কি সমস্যার সমাধান হবে, নাকি এই অনিয়মের পেছনে দায়ী কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত? এবার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়—এটাই তাদের দাবি।