গাজীপুরে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তির ওপর হামলা-কোপানোর ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গাজীপুর নগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তুহিনের বন্ধু শামীম হোসেন বলেন, হত্যার ঘটনার আগে এক নারী ও কয়েক যুবক একজনকে ধাওয়া করছিল। তুহিন মোবাইল ফোনে সে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে যান। পরে জানতে পারি, একটি দোকানে তুহিনকে কোপানো হচ্ছে।
সাংবাদিক তুহিনের এলাকার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আমি এসে দেখি তাকে (তুহিন) হত্যা করা হয়ে গেছে। তখন লোকজন তার চারপাশে দাঁড়িয়ে দেখছে। আমি এ ঘটনা দেখে কান্না করতে ছিলাম। ফুলবাড়িয়া বাড়ি আমার। পরে শুনি যাকে হত্যা করা হয়েছে তার বাড়িও ফুলবাড়িয়া।
তিনি আরও বলেন, আমি মর্মাহত। মানুষ কেন পুলিশের আসায় বসে থাকে। সমাজ কেন ভূমিকা নেয় না, মানুষ কেন ভূমিকা নেয় না। কেন মানুষ শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে। ঘটনা ঘটার পরে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেল অথচ জনগণ তাদেরকে আটকাল না। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, তুহিনকে কুপিয়ে হত্যার আগমুহূর্তের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পেছন থেকে সেই দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করছিলেন তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এই দৃশ্য ধারণ করায় তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের সাংবাদিক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।
সিসিটিভি ফুটেজের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে ওই এলাকা দিয়ে কালো রঙের জামা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছিলেন।
পেছন থেকে নীল রঙের জামা পরা এক ব্যক্তি ওই নারীকে টেনে ধরেন। নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতি রোধ করেন ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে চড়থাপ্পড় মারেন। ঠিক এমন সময় পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে কয়েক যুবক ওই ব্যক্তিকে কোপানোর চেষ্টা করে। পরে ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যান।
অতিরিক্ত উপকমিশনার রবিউল ইসলাম বলেন, ধাওয়ার শিকার ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কালো রঙের জামা পরা ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা বাদশার ওপর হামলা চালায়।
বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতেই তুহিনের ভাই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে ২৫ থেকে ২৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। উৎস: আরটিভি অনলাইন।