নিনা আফরিন, পটুয়াখালী: জুলাই বিপ্লবে অংশ না নিয়েও প্রতারণার মাধ্যমে পটুয়াখালীতে শহীদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বশির সরদার (৪০), সদর উপজেলার বদরপুর ইউনিয়নের খলিসাখালী গ্রামের বাসিন্দা ও পেশায় এক সময়কার চা বিক্রেতা।
২০২৪ সালের ৩ জুলাই বশির সরদার শহরের চৌরাস্তা থেকে বাসায় ফেরার পথে পায়ে লোহা ঢুকে আহত হন। পরে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়।
সরকারি সহায়তার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। নিহতের বড় ভাই নাসির সরদার ২২ জুলাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন।
জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন শহীদের তালিকা থেকে বশির সরদারের নাম বাতিল এবং দেওয়া সঞ্চয়পত্র স্থগিতের সুপারিশ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বশির সরদার রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হননি বরং দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা যান।
ভিত্তিহীন তথ্য ও অনুদান প্রাপ্তি
স্থানীয় ছাত্র সংগঠনের নেতারা জানান, বশির সরদারের পরিবার আহত হওয়ার দিনটিকে (৩ জুলাই) ‘জুলাই আন্দোলনে’ অংশগ্রহণের দিন হিসেবে দেখিয়ে চিকিৎসার কাগজে তা লিপিবদ্ধ করায়। এরপর জেলা প্রশাসন থেকে ২ লাখ টাকা ও সরকারের পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে এই টাকার ভাগ নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দিলে অভিযোগের ভিত্তিতে ২৩ জুলাই জেলা প্রশাসক একটি সভায় শহীদের তালিকা থেকে নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে সুপারিশ পাঠান।
স্ত্রীর দাবি: ভ্রান্তির শিকার, বেঁচে থাকার লড়াই
নিহতের স্ত্রী রেবা আক্তার জানান, স্বামীর চিকিৎসায় ঋণ করে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ির পরামর্শে ভুল তথ্য দিয়ে শহীদ তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হন। এখন অনুদান ফেরতের আশঙ্কায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। রেবা বলেন, "যদি সরকার সব টাকা ফেরত চায়, তাহলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া গতি থাকবে না।"
ভাইয়ের স্বীকারোক্তি
বশিরের বড় ভাই নাসির সরদার বলেন, "বশির জুলাই আন্দোলনে অংশ নেননি। কেবল চিকিৎসা খরচ মেটাতে শহীদ হিসেবে অনুদান নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে নিজের ভুল বুঝে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছি।"