শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন বাজারে প্রতিদিন মাছ কাটেন প্রায় শতাধিক যুবক। একজন শ্রমিক মাছ কেটে দৈনিক গড়ে ২ হাজার টাকা আয় করেন। সে হিসেবে, একজনের মাসিক আয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। ফলে শতাধিক মাছকাটা শ্রমিকদের সম্মিলিত মাসিক আয় দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। শুক্রবার কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাছকাটা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। মাছ কাটা ছাড়াও মাছের আঁশ বিক্রি করেও এদের অতিরিক্ত আয় হয়।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, কুমিল্লা মহানগরীর টমছম ব্রিজ, চকবাজার, রাজগঞ্জ বাজার, বাদশা মিয়া বাজার, রানীর বাজার, মগবাড়ি চৌমহনী এলাকায় কোথাও সারিবদ্ধভাবে আবার কোথাও যত্রতত্রভাবে বসে মাছ কাটছেন এসব শ্রমিক। তাদের মধ্যে যুবকদের সংখ্যাই বেশি। মাছকাটা শ্রমিকদের আবার একাধিক সহকারীও রয়েছে। বয়সে তারা শিশু। প্রতিটি মাছের দোকানের সামনে তারা দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের কাজ হচ্ছে, ক্রেতা মাছ কিনে ব্যাগটি হাতে নেওয়ার আগেই বলে ওঠা—"স্যার, মাছ কাটাবেন?" আপনি যদি বলেন, “ভিড় আছে না? দাঁড়িয়ে থাকতে হবে নাকি?”, তখন তারা বলবে, “না স্যার, একদম ফাঁকা।” অথচ বাস্তবে কোনো মাছ কাটার দোকানই ফাঁকা থাকে না। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতেই হয়।
শুক্রবার সকালে কুমিল্লার টমছমব্রিজ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক জায়গায় দুই সারিতে প্রায় ১০ জন মাছ কাটছেন। একই বাজারে অন্য আরেক স্থানে মাছ কাটছেন আরও ৭ জন শ্রমিক। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টমছমব্রিজ বাজারেই মোট ১৭ জন মাছকাটা শ্রমিক কাজ করছেন। কুমিল্লা নগরীতে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি বিভিন্ন বাজারে মাছ কাটেন। বড় মাছ কেজিপ্রতি ১০ টাকা এবং ছোট মাছ কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। গড়ে প্রতিদিন জনপ্রতি আয় প্রায় ২ হাজার টাকা। মাস শেষে একেকজনের আয় হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। তবে এই আয়ের অংশ থেকে সহকারীদেরও দিতে হয়। এছাড়া মাছের আঁশ বিক্রি করেও বাড়তি আয় হয় বলে জানান সালাউদ্দিন, সুমন, আলমরা।
সুমন জানান, প্রতি শুক্রবার ও শনিবার তারা গড়ে ৩০০ কেজি মাছ কাটেন। এ সময় তাদের আয় হয় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। আবার অফিস খোলা দিনে অনেক সময় কাজ কম থাকে। তখন কখনো কখনো ১০০০–১৫০০ কেজি মাছ কাটতে হয়। সে সময় আয় কমে যায়। তবে গড় আয় হিসেবেই সুমন জানান, “এটাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে।”
জায়গার জন্য ভাড়া দিতে না হলেও ‘খাজনা’ দিতে হয় জানিয়ে আলম বলেন, “খাজনা দিতে হয়, তবে খুব বেশি না। এটাই আরকি, তারাও চলে, আমরাও চলি। আমনে আবার তাদের নাম লিখে আমাগো বিপদে ফেলেন না।”
বিভিন্ন মাছ কাটার দোকানে দেখা যায়, একটি বড় মাছ কাটতে সর্বোচ্চ তিন মিনিট সময় লাগে। এর আগে তাদের ছোট সহকারীরা মাছের আঁশ পরিষ্কার করে বসকে দেন। বস তখন দ্রুত মাছ কেটে দেন। কাটার আগে কাস্টমারকে জিজ্ঞেস করেন—“ফ্যামিলি সাইজ কাটব, না কি মেহমান সাইজ?” ফ্যামিলি সাইজ মানে মাছের টুকরা ছোট করে, আর মেহমান সাইজ মানে টুকরা বড় করে কাটা হয়—জানালেন সালাউদ্দিন।
এই প্রতিবেদক ভিডিও ধারণের সময় রাজগঞ্জ বাজারের মাছকাটা শ্রমিক ইদ্রিস বলেন, “স্যার, অনেক সাংবাদিক আইসা আমাগো বক্তব্য নেয়। কিন্তু সরকার তো কোনো সাহায্য করে না। সরকাররে কইয়েন, আমাগো যেন সাহায্য করে।