মো. রফিকুল ইসলাম মিঠু, ঢাকা: বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) উত্তরা-তুরাগ ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেল অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি, জালিয়াতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী, বহিরাগত ও মৌসুমি দালালদের সমন্বয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক।
মঙ্গলবার ও বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন পরিদর্শন, তথ্য অনুসন্ধান এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উত্তরা বিআরটিএ অফিসে ঘুষ বানিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। নামিদামি মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে ঘুরে বেড়ায় দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা সেবা প্রত্যাশীদের জিম্মি করে অযথা হয়রানি করছে। ফাইল জমা ও প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেককে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ—“বিআরটিএর ইটেও যেন লেখা আছে, টাকা দে, কাজ হবে।”
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, ড্রাইভিং পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার নামে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিসে কোনো কাজ করতে ঘুষ ছাড়া উপায় নেই।
বিআরটিএ অফিসের সামনে সরকারি জমির ওপর অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে খাবারের হোটেল, ফটোকপি, কম্পিউটার ও চায়ের দোকান। এসব স্থাপনা দালাল চক্রের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও কিছু রাজনৈতিক নেতা এসব দখলদারির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিএনসিসি ও রাজউক মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন করে দোকানপাট গড়ে ওঠে।
অতীতে র্যাব ও ভ্রাম্যমাণ আদালত একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেফতার ও শাস্তি দিলেও অনেকেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার আগের মতো দালালি শুরু করেছে। তাদের অনেকেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ঘুষ না দিলে ফাইল নড়ে না। তারা বলেন, “আগে দালালের সংখ্যা বেশি ছিল, এখন কিছুটা কমেছে। তবে কিছু প্রভাবশালী দালাল সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।”
বিআরটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে দালালের সংখ্যা নেই বললেই চলে। অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে স্থানীয় মানুষ ও ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অনিয়ম বন্ধ হবে না। তারা প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান, র্যাব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।