বিল্লাল হোসেন, কালীগঞ্জ: [২] গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বেলাই বিল পাড়ের বাসিন্দা সত্তোরর্ধ মো. আজম আলী। এবার তিনি বেলাই বিলে ৩ বিঘা জমিতে ধানের আবাধ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে সব ধানী জমি। এমন অবস্থায় এর আগে তিনি কখনো পড়েননি আজম আলী।
[৩] কান্না জড়িত কন্ঠে কৃষক আজম আলী বলেন, ‘আমার সব শেষ হইয়া গেছে বাবা, অহন আমার পরিবার নিয়া না খাইয়া মরন লাগবো’।
[৪] উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের বেলাই বিল পাড়ের চল্লিশোর্ধ আরেক বাসিন্দা মোশারফ আকন্দ বলেন, আমার জমি বেলাই বিলেন প্রায় মাঝামাঝি স্থানে। ৩ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছি। ফলনও বেশ ভালোই হয়েছিল। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে পানি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি হঠাৎ করে পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় ধান কাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাছাড়া চারদিকে একই সমস্যা, তাই শ্রমিক পাওয়াটাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যে কারণে পাকা ধান ঘরে তুলা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। আমি মাত্র আধা বিঘা জমির ধান কাটতে পেরেছি বাকি আড়াই বিঘার ধান সব পানির নিচে। এ বছর পরিবার নিয়ে চলা কষ্টকর হয়ে যাবে।
[৫] একই এলাকার চল্লিশোর্ধ কৃষক মো. সিরাজ মোল্লা জানান, তার জমি বেশি নেই। ১ বিঘার কাছাকাছি জমিতে ধানের চাষ করেছেন। হঠাৎ পানি চলে আসায় তিনিও ধান কেটে আনতে পারেননি। প্রায় সকল ধান পানির নিচে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শ্রমিক আসে। তারা বিল বেলাই ও আশেপাশের অঞ্চলের জমির ধান চুক্তি অনুযায়ী কাটেন। সেই শ্রমিকদের চাহিদাও আকাশ ছোঁয়া। তাই খরচের টাকা যোগাড় করতে না পেরে অনেক কৃষক হাল ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তাদের দাবি এই দুর্যোগে সরকার যেন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
[৬] একই এলাকার লাগালিয়া গ্রামের ত্রিশোর্ধ কৃষক মো. সোহেল মিয়া বলেন, বিল বেলাইয়ের সকল জমিই নিচু। তাই অল্প জোয়ার বা বর্ষার পানি আসলে সহজেই ডুবে যায়। প্রতি বছর পানি কিছুটা পরে এলেও এবারের পানি হঠাৎ চলে আসায় কোন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই অতিরিক্ত লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে।
[৭] জানা গেছে, বিল বেলাইয়ের সুবিশাল প্রান্তর জুড়ে শুধুই ধানের আবাদ করা হয়। এই বিলে শুধু একবার ধান চাষ করা যায়। যে কারণে এটাকে এক ফসলি জমি বলা হয়। এছাড়া বিল বেলাইকে বলা হয় জেলার শস্য ভান্ডার। এই বিল বেলাই থেকে উৎপাদিত ধান ও সবজি গাজীপুর জেলারসহ আশপাশের এলাকার চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিলের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে খাল। শুকনো মৌসুমে সেই খালের পানিতে জমিতে সেচের চাহিদা পূরণ হয়। তবে এবার অসময়ের জোয়ারের পানিতে চাপা পড়েছে কৃষকের মুখের হাসি। বিলের প্রায় এক তৃতিয়াংশ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ।
[৮] সরেজমিন দেখা যায়, খাল দিয়ে পানির প্রবল ¯্রােতে ধেয়ে আসছে। কয়েকদিন আগেও যেখানে শুকনো ছিল আজ সেখানে পানিতে টৈটুম্বুর। ধান থেকে চাল না হলেও অন্তত খড় যেন বাঁচানো যায় এ চিন্তা করে কৃষকরা নৌকা দিয়ে বিলের বিভিন্ন প্রান্তের কাঁচা, আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে আসছেন। খড় সংগ্রহ করা না গেলে পুরো একটি বছর গবাদি পশু পালন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
[৯] এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ ফারজানা তাসলিম বলেন, আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তবে এটা যেহেতু সারাদেশের সমস্যা তাই অনুমোদন হতে একটু সময় লাগবে। তবে আশা করা যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সরকারীভাবে কিছু সহযোগীতা পাবে। সম্পাদনা: হ্যাপি