শিরোনাম
◈ পিআর পদ্ধতি কী, কেন প্রয়োজন ও কোন দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে?" ◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি

প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৫:৩৯ বিকাল
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ০৬:৫৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দূর্গাপুরের প্রকৃতি সৌন্দর্য উজার করে দিয়েছে 

মেঘের গান শুনে পথ হারিয়েছে যারা, দূর্গাপুর বিজয়পুরের স্বপ্নপুরী শেষ সীমানা

স্বপ্নপুরী

শাহীন খন্দকার: বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার অন্তর্ভুক্ত দুর্গাপুর উপজেলা, সুসং দুর্গাপুর নামেই পরিচিত। ২৭৮দশমিক ২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোণা জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়ের গারো পাহাড়ের কোল ঘেসে এর উত্তরে ভারতের মেঘালয়। 

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশিরবিন্দু। প্রকৃতি অপার সৌন্দর্য উজার করে দিয়েছে । মেঘেদের গান শুনে পথ হারিয়েছে যারা,দূর্গাপুরের বিজয়পুরের স্বপ্নপুরী তাদের জন্য শেষ সীমানা!

বাংলাদেশের সেই সৌন্দর্য্যরে জায়গাগুলো যাদের দেখা হয়নি, তাঁরা খুব সহজেই বাংলাদেশের গারো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়ানো ছোট্ট জনপদ সুসংদুর্গাপুর দেখে আসতে পারেন। সীমান্ত ঘেষেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বাঘমারা বাজার। এখানকার প্রধান নদ-নদী সোমেশ্বরী, কংশ এবং আত্রাখালি নদী। 

জনশ্রুতি রয়েছে সোমেশ্বর পাঠককে যুদ্ধে পরাস্ত করে সুসঙ্গ অর্থাৎ ভালো সৎসঙ্গ নামে এক সামন্ততান্ত্রিক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। এই সোমেশ্বর পাঠকই পরবর্তীতে সুসঙ্গ রাজবংশের আদি পুরুষ। সেই থেকেই দুর্গাপুরের নাম হয় সুসং দুর্গাপুর। যদি আপনি ভ্রমন প্রিয় হয়ে থাকেন তাহলে আজই ঘুরে আসুন সুসং দুর্গাপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো।

সুসং দুর্গাপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার পাশাপাশি, গারো পাহাড়ের পাদদেশের স্বপ্নপুরী রির্সোটে রাত্রি যাপন করে।  দেখতে পারেন, তার পাশেই সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী, হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, সাদা মাটির পাহাড়। বয়ে গেছে টলমলে ঠিক যেনো বেদেনার কোয়ার মতো জলে নেমে পরশ নিতে পারেন অঙ্গে।

সোমেশ্বরী আর ছোট ছোট টিলা বনের ভিতর দিয়ে দিগন্ত হারিয়েছে আকাশ ছোঁয়া নীল সবুজের পাহাড়ে। ছোট্ট একটি জায়গা যার পরতে পরতে জড়ানো  রয়েছে সৌন্দর্য। এখানে দেখার মতো আছে ছোট বড় পাহাড়, সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি, টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ।সুসং দুর্গাপুরের উত্তর সিমান্তে নলুয়াপাড়া, ফারংপাড়া, বারোমাড়ি, ডাহাপাড়া, ভবানিপুর, বিজয়পুর ও রানিখংসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।

স্বপ্নপুরী রির্সোটের এই পাহাড়ে প্রচুর পরিমাণে মূল্যবান শালগাছ প্রাকৃতিকভাবেই জন্মেছে। আর এই পাহাড়গুলো প্রাকৃতিক মনোরম সৌন্দর্যের আঁধার। প্রকৃতি তার ঝুলি উজার করে দিয়েছে এ গারো পাহাড়কে সাজাতে। বিচিত্র স্বাদের প্রকৃতির অলংকার যেন মানায় এই ভুস্বর্গকেই।

পাহাড়-পর্বত, ছোট-ছোট নদী, পাহাড়ি ঝরণা, শাল-গজারিসহ নানা প্রজাতির গাছ, সৌন্দর্য উঁচু-নিচু পথ দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখার মজাই আলাদা। সবুজের অপার সমারোহ এই গারো পাহাড়। পাহাড়ের অসমতল উঁচু-নিচু টিলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ঝরনা।

এই ঝর্ণার স্বচ্ছ জলরাশিতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পাওয়া যায়। দুই পাহাড়ের মাঝে সমতল ভূমি। সমতল ভূমিতে সবুজ শস্যক্ষেত। পাহাড়ে পায়ে চলার দুর্গমপথে চলাচল করে পাহাড়ি মানুষ। কোথাও কোথাও টিলার ওপর দেখা যাবে ছোটছোট কুঁড়েঘর।

সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশ। অপার সৌন্দর্যের এ পাহাড় চোখ জুড়িয়ে দেয় যেকোনো পর্যটকেরই। এ এলাকায় বাস করে বিভিন্ন শ্রেণীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন। তার মধ্যে গারো, হাজং উল্লেখযোগ্য। 

দুর্গাপুরের বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি। সুসং দুর্গাপুর ও এর আশপাশের উপজেলা কলমাকান্দা,পুর্বধলা, হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়ায় রয়েছে গারো, হাজং, কোচ, ডালু, বানাই সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস। ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমিতে চর্চা হয় তাদের ভাষা সংস্কৃতি। এদের সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করার জন্য ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি।

দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার দুরে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের শসার পাড় ও বহেরাতলী গ্রামে সাদামাটির পাহাড় অবস্থিত। অপরিকল্পিতভাবে এখান থেকে খনিজ সম্পদ সাদামাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার।

পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধারগুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার। বিভিন্ন রঙের মাটি, পানি ও প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মনকে বিমোহিত করে। সাদা, গোলাপি, হলুদ, বেগুনি, খয়েরি, নীলাভসহ বিভিন্ন রঙের মাটির পাহাড় চোখ জুড়িয়ে দেয়। সোমেশ্বরী নদী অতিতে মহাশৈল মাছ , লাচোসহ বাণীহড়ি মাছের জন্য বিখ্যাত ছিলো। কালের বিবর্তনে এখন ধুধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত। নদীটি মেঘালয় রাজ্যের সিমসাং নদী থেকে বাগমারা বাজার হয়ে বাংলাদেশের রানীখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে সোমেশ্বরী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোনো মৌসুমে সোমেশ্বরীতে পানি প্রবাহ থাকে না। 

এই নদীর পানিতে নেমে পায়ে বালির স্পর্শ পাওয়ার অনুভূতিটা দারুণ। চাইলে মাঝির সাহায্যে  ১০ টাকা দিয়ে নদীর এপার ওপার ঘুরে আসতে পারেন। শহুরে এলাকায় যাদের একেবারেই ইট পাথরের চার দেয়ালে বড় হওয়া তাদের ভেতরের মানুষটিকে রঙিন করে তুলতে পারে এ নদীর চারিপাশে এপারে বাংলাদেশের বন টিলার সৌন্দর্য। আর সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ে বুকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে নীল আকাশ। 
আপনি কিভাবে যাবেন ?

যাওয়া এবং ফেরার জন্য সবচাইতে ভালো হবে ঢাকা থেকে সুসং দুর্গাপুরে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে জারিয়া স্টেশনে নেমে বাইকে করে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সুসং দুর্গাপুরের দিনে ও সন্ধ্যায় বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। বাসের ভাড়া পড়বে ৪৫০ টাকা। ময়মনসিংহ ব্রীজ থেকে  সিএনজিতে ২০০ টাকা আর দুর্গাপুর বাসে  যেওতে চাইলে ৬০-৮০ টাকা।

যদিও খানাকন্দ নাই খুবই ভারি ভারি বালু এবং কয়লার ট্রাক চলাচল করে বলে রাস্তা টেকে না কিন্তু সবসময় ভেজা এবং সমান থাকে। বাস থেকে সিএনজি ভ্রমণ আরামদায়ক। ময়মনসিংহ থেকে সময় লাগে মাত্র দেড় ঘণ্টা। এক সিএনজিতে পাঁচজন আসা যায়। আর ঢাকা থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে যেতে। সুসং দুর্গাপুর বাজার থেকে রিকশা বা মোটরসাইকেল নিয়ে সুনীল সোমেশ্বরী নদীপার হয়ে গারো পাহাড়, গোলাপি পাহাড়, নীল/সবুজ পানির লেক ঘুরে আসা যায়।

সেখানে ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার ছাড়াও দেখার মতো রয়েছে একটা চার্চ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন ট্রেনিং নেওয়ার জন্য কয়েকটি পিলার। সারাদিনের জন্য রিকশা অথবা মোটরসাইকেল ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারেন পুরো দুর্গাপুর যেখানে আপনাকে খরচ করতে হবে ৮০০-১০০০টাকা (যার কাছে যা রাখতে পারে)। এখানে বিভিন্ন মানের গেস্ট হাউস আছে। বহেরার তলী গ্রামে দূর্গাপুরের শেষ সীমানায় আধুনিক ফাইভস্টার স্বপ্নপুরী রির্সোট। 

স্বপ্নপুরি রির্সোটে আপনি ফাইভস্টারের খাবারসহ আতিথেয়তায় চ্যাপা শুঁটকি থেকে শুরু করে মাছভর্তা সবকিছুতেই পাওয়া যায় ঘরোয়া স্বাদ। রয়েছে সর্বক্ষণ বিদুৎ ব্যবস্থা, ইন্টারনেটসহ অত্যাধুনিক সকল ব্যবস্থা। রয়েছে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি গেস্টহাউজ, ইয়ুম মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন রেস্ট হাউজ রয়েছে। যেখানে রুম ভাড়া পড়বে ৭৫০-৩০০০ টাকা। এ ছাড়া এখানে কিছু মধ্যমমানের হোটেলও আছে। স্বর্ণাগেস্ট হাউজ, হোটেল সুসং, হোটেল গুলশান, হোটেল জবা, নদী-বাংলা গেস্ট হাউসে থাকা যায়। 

এখানে হয়তো পাওয়া যাবে না ফাইভস্টারের খাবার কিন্তু আতিথেয়তায় চ্যাপা শুঁটকি থেকে শুরু করে মাছভর্তা সবকিছুতেই পাওয়া যায় ঘরোয়া স্বাদ। সারিবদ্ধ সবুজ পাহাড়, স্বচ্ছ পানির পাহাড়ি নদী সোমেশ্বরী, দিগন্ত বিস্তৃত বালুচর যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। তাই মুগ্ধতা পেতে আর দেরি না করে একবার হলেও ঘুরে আসুন সুসং দুর্গাপুরে।


এসকে/এএ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়