এএইচ রাফি: সকল মানুষ এক, মানুষের মাঝে থাকবে না ভেদাভেদ-এই বার্তা নিয়ে ভারতের পাঞ্জাব থেকে সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন ধীরেজ কুমার (৩০) নামের এক যুবক। গত দুইদিন যাবত তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে অবস্থান করছেন। এরআগে, গত ১৩ নভেম্বর তিনি সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করেন। এরপর তিনি সিলেট, মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জ জেলার পর এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের অবস্থান করছেন।
ভারতের বিহারের জাহানারাবাদ জেলার নওঘরের পাচুসাহার ৫ ছেলের মধ্যে ছোট ধীরেজ কুমার। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে ধীরেজ কুমার ২০১৯ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল শেষ করেন। এরপর খণ্ডকালীন চাকুরী করেছেন সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের মহামারীতে চাকুরী ছেড়ে দেন। ডায়েরি লেখা তার নেশা এবং তার মাঝে সমাজের অসঙ্গতি ও ভেদাভেদের কথা লিখেন। সেসব অসঙ্গতি ও ভেদাভেদের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন।
সাধারণ মানুষকে লিঙ্গ, জাতি ও বর্ণের ভেদাভেদ না করার বার্তা নিয়ে ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর পাঞ্জাবের পাঠানপুর থেকে ধীরেজ কুমার সাইকেল ভ্রমণ শুরু করেন। এরপর গত একবছরে পাঞ্জাব, দিল্লি, বিহার, সিকিম, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ এ পর্যন্ত ভারতের ১৪টি রাজ্যে সাইকেলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এতে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কিলোমিটার।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে ধীরেজ কুমারের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ধীরেজ কুমার জানান, আমি থ্রিসিস করতে সাইপ্রাস, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছি। মানুষ তো মানুষই। কেন মানুষের মাঝে বিভেদ থাকবে! এই বিষয়টি বুঝানোর জন্যে এবার অত্যন্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমি এই সাইকেল ভ্রমণ শুরু করেছি। ভ্রমণে বের হওয়ার সময় আমার বিশ্বাস ছিল, এই দুনিয়ার মানুষ আমাকে সহযোগিতা করবে, আশ্রয় দিবে। ভ্রমণে বের হওয়ার পর আমি এই সহযোগিতা পেয়েছি। তবে এর ব্যতিক্রম মানুষও এই পৃথিবীতে আছে। যারা আশ্রয় দেয়নি। সেখানে আমাকে ক্যান্ট করতে হয়েছে। না হয় মন্দির বা গুরুদোয়ারায় থেকেছি।
তিনি জানান, বাংলাদেশ আমার জন্য ব্যতিক্রম। আমি এখানে প্রথম এসেছি। এটা যেহেতু আমার কাছে নতুন জায়গা, তাই আসার সময় টাকা নিয়ে এসেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এখনো এখানে কোন টাকা খরচ করতে হয়নি। বাংলাদেশের সাইকেলিস্ট ভাইয়েরা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন, আপ্যায়ন করেছেন। বাংলাদেশের মানুষ অনেক আন্তরিক। গত দুইদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছি সাইকেলিস্ট আবু হানিফ নোমানের বাসায়৷
তিনি আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আমি ঢাকায় যাব৷ সেখান থেকে ময়মনসিংহ যাব। এরপর বেনাপোল হয়ে কোলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো। তবে এই দেশে আসার পর আমার ধারণা অনেক পাল্টে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাইকেলিস্ট আবু হানিফ নোমান বলেন, 'ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সাইকেলে ভ্রমণ করে ধীরেজ মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ না রাখতে বার্তা দিচ্ছেন। তার এই উদ্যোগ আমার কাছে ভাল লেগেছে। আমরা সাইকেল কমিউনিটি একজনের সাথে আরেক জনের প্রায় সময় যোগাযোগ হয়। সেই সুবাদে ধীরেজের সাথে আমাদের সবার যোগাযোগ হয়েছিল।'