সঞ্চয় বিশ্বাস: ব্যঙ্গ করে নাম ধরে ডাকা, বদনাম করা, লাথি মারা, বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করা বা উত্ত্যক্ত করা, মানসিক চাপ দেওয়াকে বুলিং বা রাগিং হিসেবে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় এনে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুলিং বা র্যাংগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৩’ এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বাংলানিউজ
দেশের সব সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। আর এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হলে তা অবিলম্বে কার্যকর করা বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নীতিমালায় বলা হয়, বুলিং বা র্যাগিং হলো ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিকর বা বেদনাদায়ক এবং আক্রমণাত্মক ব্যবহার, যার প্রতি করা হয় তার নিজেকে তা থেকে রক্ষা করা কষ্টকর হয়ে যায়। বুলিং বা র্যাগিং শারীরিক বা মানসিক হতে পারে, একজন অথবা দলবদ্ধভাবে করতে পারে। বুলিং বা র্যাগিং ভিকটিমের পীড়া অথবা বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শুধুমাত্র সহপাঠী বা শিক্ষার্থী নয় শিক্ষক-অভিভাবকদের দ্বারাও বুলিং বা র্যাগিং হতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র্যাগিংকারী শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীরা সাধারণত দুর্বল শিক্ষার্থীকে বেছে নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে নিজেদের জাহির করার লক্ষে ভিকটিমকে হাসির পাত্র হিসেবে উপস্থাপন করা এর প্রধান উদ্দেশ্য।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র্যাগিং বা হেজিং বা ফ্যাগিং মৌখিক বা শারীরিক ভাবে করা হয়ে থাকে। কাউকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা বা লেখা যা খারাপ কোনো কিছুর প্রতি ইঙ্গিত বহন করাকে মৌখিক বুলিং বা র্যাগিং বুঝাবে। কাউকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করা, হাত দিয়ে চড়-থাপ্পড়, পা দিয়ে লাথি মারা, ধাক্কা মারা, খোঁচা দেওয়া, থুথু মারা, বেঁধে কোনো বিশেষ ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বা বসে বা বিশেষ অবস্থায় থাকতে বাধ্য করা, জিনিসপত্র জোর করে নিয়ে যাওয়া বা ভেঙে ফেলা, মুখ বা হাত দিয়ে অশালীন বা অসৌজন্যমূলক অঙ্গভঙ্গি করা ইত্যাদি শারীরিক বুলিং বা র্যাগিং। এছাড়াও সামাজিক, সাইবার, স্ক্রেচ্যুয়াল, জাতিগত, অন্যান্য বুলিং বা র্যাগিং করা হয়ে থাকে।
বুলিং বা র্যাগিং প্রতিরোধে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে 'বুলিং বা র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি’ গঠন করতে হবে। এই কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র্যাগিং হয় কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবেন। পর্যবেক্ষণের জন্য বুলিং বা র্যাগিং লগস তৈরি তৈরি করবেন, প্রয়োজনে প্রশ্নমালা ব্যবহার করবেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং বা র্যাগিং প্রতিরোধে অভিযোগে বক্স রাখার ব্যবস্থা করবেন এবং অভিযোগের গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নিয়মিত সভায় মিলিত হয়ে বুলিং বা র্যাগিং সংক্রান্ত মনিটরিং কার্যক্রম পর্যালোচনা করবেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট দাখিল করবেন। এক্ষেত্রে বুলিং বা র্যাগিংকারী শিক্ষক অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় কার্যার্থে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠাবেন। সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর বিদ্যমান বিধিবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবে। বুলিং বা র্যাগিংকারী শিক্ষার্থী হলে এর ধরন ও গুরুত্ব অনুযায়ী বিধিমালা অনুয়ায়ী বুলিং বা র্যাগিংকারীকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং ঘটনার গুরুত্ব সাপেক্ষে প্রচলিত আইন অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। প্রতি ছ'মাস অন্তত একবার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে এ বিষয় থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ আয়োজন করবেন।
বুলিং বা র্যাগিংয়ে কোনো শিক্ষক অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী হবে এবং তা শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ রূপ অভিযোগের জন্য তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তাছাড়া যাদের ক্ষেত্রে ২০১৮ প্রযোজ্য নয়, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে কিংবা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
এসবি/এসএ