বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়-এর মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদানকারী (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে আজ (শনিবার) থেকে আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অর্থাৎ, এবার থেকে বিকাশ, নগদের মতো এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) ওয়ালেট ব্যবহারকারীরা একে অপরের সাথে সরাসরি লেনদেন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগ গত মাসে (১৩ অক্টোবর) ঘোষণা দেয় যে, ১ নভেম্বর থেকে তাঁদের নতুন এই সুবিধা চালু হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করা হবে, যেটা এতদিন কেবলমাত্র ব্যাংক টু ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো।
উল্লেখ্য, এতদিন এমএফএস সেবাদানকারী ওয়ালেটগুলোর মাঝে লেনদেনের একমাত্র মাধ্যম ছিল বিনিময় নামের একটি অ্যাপ। তবে অ্যাপটি ব্যবহার করে লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়কেই বিনিময় অ্যাপে নিবন্ধিত হতে হতো। ফলে এক এফএমএস থেকে অন্য এফএমএস-এ লেনদেনের বিষয়টি অনেকটাই জটিল ও সময়সাধ্য ছিল।
কিন্তু এখন থেকে এফএমএস ব্যবহারকারীরা নিজেদের মধ্যে সহজেই সরাসরি লেনদেন করতে পারবেন। তৃতীয় কোনো অ্যাপে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়বে না। দেশের আর্থিক খাতে নগদ অর্থের ব্যবহার কমিয়ে এনে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই সুবিধা চালু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন এই উদ্যোগের এখানেই অবশ্য শেষ নয়। এফএমএস ওয়ালেটগুলোর মাঝে সরাসরি লেনদেন ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এমএফএস অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটিও আরও সহজতর করেছে।
এছাড়াও, এখন থেকে ব্যাংক এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে পারবে। এক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হবে ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) প্ল্যাটফর্ম।
উল্লেখ্য, ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) বা লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সেবার অধীনে দেশের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার প্রতিটি প্ল্যাটফর্মই একে অপরের সাথে লেনদেন করতে পারবে। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে একজন গ্রাহকের জন্য ডিজিটাল লেনদেনের পরিধি আরও বিস্তৃত হলো।
বাংলাদেশের ব্যাংকের নতুন সেবায় খরচ কত?
চলুন এবারে দেখে নেওয়া যাক, ডিজিটাল লেনদেনের প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজেদের মাঝে টাকা আদানপ্রদানের খরচ কত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়ন অনুযায়ী, বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো এমএফএস ওয়ালেটগুলোর একটি থেকে অন্যটিকে টাকা পাঠাতে চার্জ দিতে হবে হাজারে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা।
অর্থাৎ, এক ওয়ালেট থেকে অন্য ওয়ালেটে ১ হাজার টাকা পাঠাতে একজন গ্রাহকের খরচ হবে সর্বোচ্চ ৮ টাকা ৫০ পয়সা। উল্লেখ্য, এমএফএস ওয়ালেট থেকে ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রেও খরচ একই থাকবে।
এছাড়া ব্যাংক থেকে অন্য যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে প্রতি ১ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা খরচ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংক চাইলে বিনা খরচেও গ্রাহককে এ সুবিধা দিতে পারে, যেমনটা এতদিন ছিল।
অন্যদিকে, একটি পিএসপি অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যাংক বা এমএফএস-এ অর্থ পাঠাতে প্রতি হাজারে গুণতে হবে ২ টাকা। এক্ষেত্রে ‘রেভিনিউ শেয়ারিং’ মডেল অনুসরণ করা হবে, ফলে এই লেনদেন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রতিটি পক্ষই এই টাকার ভাগ পাবে।
উল্লেখ্য, বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এম ক্যাশ ও ট্যাপ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াস সার্ভিস বা এমএফএস সেবা প্রদান করে থাকে।