মনিরুল ইসলাম: বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আলোচনার প্রথম দিনেই ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে শুল্ক কমানোর বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক কমানো হবে— এমন ইঙ্গিত আমরা পেয়েছি।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শুল্ক যথেষ্ট পরিমাণে কমবে বলে আশা করছি। তবে ঠিক কতটা কমবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। বুধবার (৩০ জুলাই) ও বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) আরও বৈঠক রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ইস্যুতে তৃতীয় দফার আলোচনার প্রথম দিনের বৈঠকটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাওসার চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন বৈঠকে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সহকারী ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। তার সঙ্গে রয়েছেন দেশটির বাণিজ্য ও শুল্ক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পুরো প্রক্রিয়াটি সমন্বয় করছে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস।
পাল্টা শুল্ক কমাতে আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা
বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা গার্মেন্টস, চামড়া ও অন্যান্য পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে, তা কমাতে ইতোমধ্যে আমদানি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামী এক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের গম, ডাল ও এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকার জি-টু-জি ভিত্তিতে বছরে ৭ লাখ টন গম আমদানির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং আরও ২ দশমিক ২০ লাখ টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। একইসঙ্গে এলএনজি আমদানিও বাড়ানো হবে। এছাড়া সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি বোয়িং বিমান কেনার পরিকল্পনাও করছে।
বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ
শুল্ক আলোচনার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আরও ১ দশমিক ৫ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের আমদানির লক্ষ্যে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। এই দলে রয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এবং গম, ডাল ও সয়াবিনের শীর্ষ আমদানিকারক কোম্পানি টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও সিটি গ্রুপের প্রতিনিধিরা।
এই প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের সঙ্গে পণ্য ক্রয় চুক্তি করবে। অন্যদিকে সরকারি প্রতিনিধি দল ইউএসটিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুল্ক ইস্যুতে চূড়ান্ত দরকষাকষিতে অংশ নিচ্ছে।
শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে ১ আগস্ট থেকে
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ এবং বাড়তি আমদানি পরিকল্পনার কারণে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন