দেশে এখন ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে, যা পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে বলে জানিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া আইনের ব্যত্যয় তো হয়েছেই, সেইসঙ্গে প্রক্রিয়াগুলোও ধ্বংস করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমানের লেখা বই ‘অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতা: যাপিত জীবনের আলেখ্য’ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লেখক হোসেন জিল্লুর রহমান।
উপদেষ্টা বলেন, মানুষগুলো তো রয়েই গেছে। মানুষগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। অনেকে বলে সব বাদ দিয়ে দাও। কিন্তু সেটা সম্ভব না। এ জন্য মাথায় হাত বুলিয়ে, ধমক দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা কতোটা কঠিন, তা তুলে ধরে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য-তাদের ক্ষমতার “চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স” নেই। এখানে সংস্কার না হলে যত সংস্কারই করা হোক, কোনো লাভ হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কার দরকার।
সরকারের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে যখন এই সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন দেখা গেছে এ রকম অবস্থা বিশ্বে কোথাও নেই। অর্থনৈতিক বিপর্যয় হয়েছে। ব্যাংক খাতের ৮০ শতাংশ অর্থ নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের পুনর্গঠনের জন্য ৩৫ বিলিয়ন ডলার লাগবে। যদিও আইএমএফ প্রাথমিক হিসেবে বলেছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার লাগবে।’
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঢাকায় আপনি নিউ ইয়র্কের মতো অনেক কিছুই পেতে পারেন, কিন্তু নেত্রকোনায় চিত্র একেবারেই আলাদা। আমাদের নীতিনির্ধারণ বাস্তবসম্মত হতে হবে, জনপ্রিয়তানির্ভর নয়।
গ্রন্থাকার ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, অর্থনীতি, শাসন ও ক্ষমতার আন্তঃক্রিয়া-এই তিনটির সম্মিলনই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। বাংলাদেশের মানুষ বহন করে এক মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্প, যা কোনো প্রতিকূলতার মুখেও থেমে যায় না। আমরা ২০১৩ থেকে ২০২৫-এই সময়ে ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করেছি; দেখেছি কীভাবে দমনমূলক শাসন একসময়ে স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়। কিন্তু আমি একইসঙ্গে দেখেছি কীভাবে মানুষ রুখে দাঁড়িয়ে নিজের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এই বইটি সেই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে লেখা, পরিবর্তনকে সামনে থেকে দেখার ফল।
প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ বলেন, অর্থনীতি আগে, না ক্ষমতা-এ প্রশ্ন বহু পুরনো। কিন্তু ইতিহাস জুড়েই দেখা যায়, ক্ষমতা সব সময় শ্রেণিভিত্তিক কাঠামোর ওপর নির্ভর করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, আমরা এখন এক নিম্নমাত্রার ভারসাম্যে আটকে আছি। সুশাসন এবং অংশগ্রহণমূলক কাঠামোর অভাবে আমাদের উন্নয়ন টেকসই হতে পারছে না। সূত্র: মানবজমিন