শিরোনাম
◈ নির্বাচনী জোট গঠনে ধীরে বিএনপি, সারা পাচ্ছে না জামায়াত ◈ বিশ্বসেরা মেধাবীদের জন্য ভিসা ফি বাতিল করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য ◈ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সতর্কবার্তা ◈ নিজ দেশেই বোমা হামলা পাকিস্তান বিমানবাহিনীর, নারী-শিশুসহ নিহত ৩০ ◈ ছাত্রদলের দাবির মুখে পেছালো রাকসু নির্বাচন ◈ বিএনপির উদার দৃষ্টিভঙ্গি স্থিতিশীল বাংলাদেশের অর্জনে সহায়ক হবে, মঈন খানের বাসভবনে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ◈ আমাকে দোষী বানাতে ‘ভুয়া’ নথি ব্যবহার হচ্ছে: দাবি টিউলিপের ◈ আন্দোলনে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া অডিওতে হাসিনার কণ্ঠ শনাক্ত: ট্রাইব্যুনালে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ◈ ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছে: চলতি বছরে ১৭৯ জন নিহত, হাসপাতালে আসার মাত্র দু-তিন দিনের মধ্যে প্রাণহানি বেশি ◈ বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোকজনকে ডিসি-এসপি বানানো হচ্ছে: রুহুল কবির রিজভী

প্রকাশিত : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:১৯ রাত
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:১৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গাজীপুরে মাটির নিচে পানি সরবরাহ লাইন: আলোর মুখ দেখেনি ২৪ কোটি টাকার প্রকল্প

এ এইচ সবুজ, গাজীপুর প্রতিনিধি: দেশের ৩২টি শহরে বাসিন্দাদের সুপেয় পানি সরবরাহ করার জন্য পানি সরবরাহ প্রকল্প শুরু করে আওয়ামীলীগ সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রীপুর পৌরসভার এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

কাজের তদারকি করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। কয়েক দফা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও আলোর মুখ দেখেনি প্রকল্পটি। মাটির নিচে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি সরবরাহ প্রকল্প। সংযোগ লাইন ভেঙে গেছে বহু এলাকায়। নিম্ন মানের পাইপ ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) কর্মকর্তা। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভবনা নেই বলছে সংশ্লিষ্টরা। পৌরসভার বাসিন্দারা জানান একদিনও পানি সরবরাহ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। 

সরেজমিনে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, শহরে পানি সরবরাহ প্রকল্পের অধীনে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০২১ অর্থবছরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৩৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৮ লাখ ৬৭ হাজার ১৯ টাকা। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১০টি পাম্প হাউস বসানোর জন্য বরাদ্দ ৮ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪৭ টাকা। পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করে মনিরা ট্রেডার্স ও পাম্প হাউস নির্মাণের কাজ করে জিলানী ট্রেডার্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণ কাজের তদারকি করেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দেন। কিন্তু নির্মাণ কাজে নিম্ন মানের পাইপ ব্যবহারের ফলে মাটির নিচে পরে নষ্ট হচ্ছে ২৪ কোটি টাকার প্রকল্পটি। বেশিরভাগ এলাকার পাইপ লাইন ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে পুরো সঞ্চালন লাইন। 

স্থানীয় বাসিন্দারা বসতবাড়ি নির্মাণ রাস্তাঘাট,গ্যাস লাইন স্থানান্তর করে পানির লাইন নষ্ট করে ফেলেছে। নিম্ন মানের পাইপ ব্যবহারের ফলে বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গেছে। ১৩৮ কিলোমিটার পাইপ লাইনের প্রায় পুরোটাই বিকল। ১০টি পাম্প বসানোর কথা থাকলেও একটি পাম্প হাউস বসানোর কাজ এখনও চলমান। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগ কাজ বুঝিয়ে দিলেও বিকল রয়েছে কয়েকটি পাম্প। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভাবনা খুবই কম। 

পৌর বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু শুধু এতগুলো টাকা মাটির নিচে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। পৌর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের টাকা সব জলে ভেসে গেল। মাটির নিচে পাইপ লাইন সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন, বসতবাড়ি নির্মাণ কারখানা কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করার ফলে কেটে একাকার। এখন কোন জায়গায় পাইপ লাইন কাটা ছাড়া নাই। শুধুমাত্র প্রকল্পের টাকা লুটপাট হলো। নগরের মানুষ সুবিধা পেলো না। 

৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম বলেন, পানি প্রকল্পে ২৪ কোটি টাকা খরচ করলেও বাসিন্দাদের এক ফুটা পানিও সরবরাহ করতে পারেনি। প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। 

আজিজুল নামের এক বাসিন্দা জানান,কাজের কাজ কিছুই হলোনা। একদিনও এক সেকেন্ডের জন্য পানি সরবরাহ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। মাঝখানে কাটা হলো রাস্তা পাইপলাইন বসানোর জন্য। নষ্ট হলো গাছগাছালি। 

শ্রীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রকল্প শুরুর দিকে আমি ছিলাম না। নিয়ম অনুযায়ী আমি দায়িত্বে থাকলে আমাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। নিম্ন মানের পাইপ ব্যবহার হয়েছে। পনেরো'শ গ্রাহকের বসতবাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে আজ একটি সংযোগও নেই। 

১৩৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন পুরোটাই বিকল। কয়েকটি পাম্প নষ্ট। চালানো যাচ্ছে না। ১০টি পাম্পের মধ্যে নয়টি বুঝিয়ে দিলেও একটির কাজ এখনও চলমান। পাম্প হাউস বসানো হলে কি হবে। পুরো লাইন ভেঙে গেছে। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখার সম্ভবনা কম। 

গাজীপুরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, ২০২৩ সালে শ্রীপুর পৌর কর্তৃপক্ষকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের মান ও পাইপ নিন্মমানের হলে তারা কেন কাজ বুঝে নিলো। কোন জিনিস ব্যবহার না করলে নষ্ট তো হবেই।

শ্রীপুর পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাহেদ আখতার বলেন, কাজ বুঝে নেওয়ার পর থেকে চালানো সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে পানি সরবরাহ লাইনের অনেক পাইপ নষ্ট হয়েছে। প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে কিনা এটি নিয়ে সন্দেহ আছে। 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ও পৌর প্রশাসক সজীব আহমেদ বলেন, গৃহস্থালি কাজে বাসিন্দাদের পানি সরবরাহের জন্য প্রকল্পটির কাজ আমি যোগদানের পূর্বে শেষ হয়। হস্তান্তর আমাদের যোগদানের পূর্বে। আমি যোগদানের পর থেকে এটি বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এটি আলোর মুখ দেখার সম্ভবনা কম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়