নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন নিঝুমদ্বীপে মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে টানা তিনদিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মাওলানা মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর বাজার কমিটি ও মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন নিঝুমদ্বীপ নামার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে। তিনি নিঝুমদ্বীপ নামার বাজার মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষক ও স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন। এ ছাড়া তিনি ইসলামী যুব আন্দোলনের নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন কমিটির সদস্য হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, হুজুর জোরপূর্বক তিনদিন আমাকে মসজিদের পাশে তার থাকার রুমে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন। তিনদিন পর বাড়িতে আসলে বিষয়টি আমার পরিবারকে জানাই। আমরা গরিব মানুষ। আমার বাবা নেই। মঙ্গলবার রাতে বাজার কমিটির সভাপতি ও মসজিদ কমিটির সভাপতির সামনে সালিশে হুজুর আমাকে বিয়ে করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বাবলু বলেন, শিক্ষক সব দায় স্বীকার করেছেন এবং বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন। আর ভুক্তভোগীও বিয়েতে মত দিয়েছেন। তাই সামাজিকভাবে বিয়ে হয়েছে। যদি বিয়ে না হয়ে মামলা মোকাদ্দমা হতো, তাহলে ওই ছাত্রীর পরিবারের খরচ চালানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না। তারা অন্যের সাহায্যে জীবন চালায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাজার কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আজাদ হোসেন, মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন এবং মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনদিন ধরে ছাত্রীকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। তিনদিন পর ছাত্রী নিজে বাড়িতে ফিরে এসে জানায়, তাকে মুয়াজ্জিনের কামরায় আটকে রেখে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা শাহেদুল ইসলামকে আটক করলে তিনি সম্পর্কের কথা স্বীকার করেন এবং বিয়েতে সম্মত হন। এরপর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ৬ লাখ টাকা কাবিনে মসজিদে বিয়ে সম্পন্ন হয়।
বিএনপি নেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মেয়েটির বাবা নেই, পরিবারটি অসহায়। ঘটনাটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। তবে ছেলে রাজি হওয়ায় সবার উপস্থিতিতে ৬ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামী যুব আন্দোলনের নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের সহ-সভাপতি শাহেদ উদ্দিন বলেন, শাহেদুল ইসলাম তিন বছর আগে কমিটির সদস্য ছিলেন। নিষ্ক্রিয় হওয়ায় তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। সে যে কাজ করেছে তা অন্যায়। আমরা তার বিরুদ্ধে ছিলাম। তবে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা যেভাবে সমাধান করেছেন, আমরা সেটাতে সন্তুষ্ট।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ সুজন বলেন, আমি বিষয়টি লোকজনের নিকট শুনেছি। এ বিষয়ে আমাদের কাছে লিখিত বা মৌখিক কোনো অভিযোগ নেই। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উৎস: মানবজমিন।