লিয়াকত হোসেন জনী, মধুপুর (টাঙ্গাইল): মধুমাসে আনারসের মিষ্টি সুবাসে মুখরিত টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়। মৌসুমের শুরু থেকে দাম ভালো থাকায় কৃষকের মুখে এখন হাসি। আনারসের রাজধানীখ্যাত মধুপুরে জমজমাট বাজারে প্রতিদিনই ব্যাপক বেচাকেনা হচ্ছে। পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেলেও চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকরা সন্তুষ্ট।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ মৌসুমে মধুপুরে ৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে আনারস আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জলডুগি জাত ২ হাজার ৩৯২ হেক্টরে, ক্যালেন্ডার জাত ৪ হাজার ২২০ হেক্টরে এবং ফিলিপাইনের আমদানি করা এমডি-টু জাত মাত্র ১৮ হেক্টরে আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন ধরা হয়েছে—
এ মৌসুমে আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। এতে প্রায় ৭৬০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
মধুপুর গড়ের জলছত্র হলো দেশের সবচেয়ে বড় আনারসের বাজার। এছাড়া মোটের বাজার ও গারো বাজারেও পাইকাররা ভিড় করেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আনারস কিনতে আসছেন, ফলে বাজার সরগরম। বর্তমানে যে আনারস কয়েকদিন আগে ৪০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন তা ৪২-৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরম বেশি থাকায় আনারসের চাহিদা বেড়েছে। প্রতিদিন শতাধিক ছোট-বড় ট্রাকে মধুপুর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আনারস যাচ্ছে।
মধুপুর গড়ে আনারস চাষ শুরু হয় ১৯৪২ সালে। ইদিলপুর গ্রামের গারো নারী মিজি দয়াময়ী সাংমা ভারতের মেঘালয় থেকে ৭৫০টি আনারসের চারা এনে এ যাত্রার সূচনা করেন। ধীরে ধীরে লালমাটির আনারস আজ জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে আনারস মধুপুরের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষক সুরুজ আলী জানান, একটি আনারস উৎপাদনে প্রায় ১৫-১৮ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, পরিবহন খরচ বাড়লেও পাইকারি চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেড়েছে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাজবিনূর রাত্রী বলেন, কৃষকদের সঠিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। আনারস এখন শুধু স্থানীয় অর্থনীতিই নয়, জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।