শিরোনাম
◈ জনরায় পেলে মিলেমিশে দেশ পরিচালনার অঙ্গীকার তারেক রহমানের ◈ কোথায় গেল ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর? ◈ শেখ হাসিনাকে যেভাবে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া ◈ বাংলাদেশ সম্ভাব্য সব উপায়ে ব্যবসাবান্ধব হতে চেষ্টা করছে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ লাফার্জ হোলসিমের মাটি সংগ্রহে ফসলি জমি ও জলাশয় ধ্বংস: পরিবেশ ও কৃষি বিপর্যয়ের আশঙ্কা ◈ বাংলাদেশ ঋণের ‘২৬০ কোটি টাকা’ ফেরত দেয়নি, দাবি করল পাকিস্তান ◈ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক ◈ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (ভিডিও) ◈ বিএনপিকে দুর্বল দেখাতে অপপ্রচারের চেষ্টা চলছে: মির্জা ফখরুল ◈ গোপনে ১৯০ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আওয়ামী লীগ সরকার: টেকনোগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের চাঞ্চল্যকর তথ্য

প্রকাশিত : ১২ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৩২ বিকাল
আপডেট : ১২ আগস্ট, ২০২৫, ১১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুন্দরবন ও ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় জরুরি সম্মিলিত উদ্যোগের আহ্বান

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, সুন্দরবন থেকে: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, যা "মৎস্যভাণ্ডার" নামেও পরিচিত, কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নয়—জীববৈচিত্র্যেরও এক অনন্য ভাণ্ডার। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পানিতে জন্মানো শ্বাসমূলীয় উদ্ভিদই ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য। জোয়ারের সময় শ্বাসমূল মাটির ওপরে উঠে পানি ভেদ করে বাতাস গ্রহণ করে, যার মাথায় নিউমাটাপো নামক শ্বাসছিদ্র থাকে।

ম্যানগ্রোভ বা বাদাবনের জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ রাখা এবং এর প্রতিবেশ সুরক্ষায় প্রতি বছর ২৬ জুলাই আন্তর্জাতিক ম্যানগ্রোভ দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালে ইকুয়েডরে ম্যানগ্রোভ বন উজাড় করে চিংড়ি চাষের প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে এক অংশগ্রহণকারীর মৃত্যুর পর থেকেই এ দিবস পালনের সূত্রপাত, যা পরবর্তীতে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে শুরু করে।

বর্তমানে পৃথিবীর ১০২টি দেশে ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে, তবে মাত্র ১০টি দেশে এর আয়তন ৫ হাজার বর্গকিলোমিটারের বেশি। বাংলাদেশে অবস্থিত সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যা বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০,২৩০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬,০৩০ বর্গকিমি।

বাংলাদেশের সমুদ্রোপকূলে একাধিক ম্যানগ্রোভ বন থাকলেও সুন্দরবন প্রধান। কক্সবাজারের মাতামুহুরী নদীর মোহনার ‘চকোরিয়া সুন্দরবন’ এবং নাফ নদীর তীরের বনও উল্লেখযোগ্য। এছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণাংশেও রয়েছে ছোট একটি ম্যানগ্রোভ বন।

সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বন্যশূকর, বনবিড়াল, বানর, কুমির, ভোঁদর, ডলফিন, চিংড়ি, কাঁকড়াসহ প্রায় ১২০ প্রজাতির মাছ এবং ২৭০ প্রজাতির পাখি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বন থেকে কাঠ, গোলপাতা, মধু, মোম ও মাছ আহরণ দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

একসময় পৃথিবীতে ১,৮১,০০০ বর্গকিমি ম্যানগ্রোভ বন ছিল, যা বর্তমানে নেমে এসেছে ১,৫০,০০০ বর্গকিমির নিচে। অতিরিক্ত কাঠ ও মাছ আহরণ, উপকূলীয় ভূমির বিকল্প ব্যবহার এবং জনসংখ্যার চাপ এ বনাঞ্চলের জন্য বড় হুমকি। অথচ প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩২০ প্রজাতির পাখি, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর এবং ৪০০ প্রজাতির মাছের জীবনচক্র কোনো না কোনোভাবে ম্যানগ্রোভ বনের সঙ্গে জড়িত।

সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রাচীরের মতো কাজ করে এবং প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমায়। এক হেক্টর কেওড়া বন বছরে প্রায় ১৭০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সঞ্চয় করতে পারে। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বনে বর্তমানে ৬৬২ কোটি টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সঞ্চিত রয়েছে, যা প্রতিবছর আরও ৩৮ লাখ টন করে বাড়ছে।

১৯৯২ সালে রামসার সাইট এবং ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত সুন্দরবন সংরক্ষণে বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’ পালন করা হয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে সুন্দরবনসহ উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন রক্ষায় সম্মিলিত উদ্যোগ ও সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়