শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণে ভেঙে গেল ব্রিজ ◈ বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার: ৭ আগস্ট, ২০২৫ ◈ টাঙ্গাইলে পিকআপ-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৩ ◈ দ‌ক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালো বাংলাদেশ, একই দ‌লের বিরু‌দ্ধে ফাইনাল ১০ আগস্ট ◈ অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা কর‌ছে নির্বাচ‌নে জামায়াত ও এনসিপিকে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে গ‌ড়ে তুল‌তে ◈ নারী সহকর্মীর স‌ঙ্গে অসভ‌্যতা ও অশ্লীল ছবি পাঠানোয় নিষিদ্ধ হলেন কোচ ◈ বি‌শ্বের সাত শীর্ষ ফ্রাঞ্চাই‌জি টুর্না‌মে‌ন্টের তা‌লিকায় নেই  বিপিএল ◈ বাংলা ভাষাকে ‘বাংলাদেশি’ বলা নিয়ে প্রতিবাদে ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকরা, গ্যালারিতে টিফো উন্মোচন ◈ জয় কি নেতৃত্বে আসছেন? শেখ হাসিনার পতনকে 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে প্রতিষ্ঠার কৌশল নিয়ে এগােচ্ছে আওয়ামী লীগ ◈ অস্ট্রেলিয়ায় শিরোপা জিততে চান সোহানরা, রা‌তে রওনা হ‌লো বাংলা‌দেশ দল

প্রকাশিত : ০৪ আগস্ট, ২০২৫, ১১:৩০ রাত
আপডেট : ০৬ আগস্ট, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

 ১২৬ বছর ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক এবং বাহক হিসাবে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন কুমিল্লা  ভিক্টোরিয়া কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা: দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। ১২৬ বছর ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক এবং বাহক হিসাবে দ্যুতি ছড়ানো এই ক্যাম্পাস পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার অক্সফোর্ড নামে খ্যাতি অর্জন করা ভিক্টোরিয়া কলেজ দেখতে প্রতিদিনই অসংখ্য দর্শনার্র্থী ভিড় করেন।

কলেজটির ডিগ্রি শাখা ধর্মপুরে। উচ্চ মাধ্যমিক শাখাটি কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে। প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মুখর থাকে এই ক্যাম্পাস। ২২টি বিষয়ে অনার্স ও ১৮টি বিষয়ে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। রয়েছে ১২টি সক্রিয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের কেন্দ্রভূমিতে ভিক্টোরিয়া কলেজ দ্যুতি ছড়াচ্ছে সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানেও অসামান্য অবদান রেখেছেন এই কলেজের শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৯২১-১৯২৩ সাল পর্যন্ত কুমিল্লায় অবস্থান করেছিলেন। তার সময় কাটানো আর কবিতা লেখার স্থানটি ছিল ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনেই রানীর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে। কলেজছাত্রদের সঙ্গে তার ছিল দারুণ সখ্য। আড্ডা, গান গাওয়া ছিল তখন রোজকার ব্যাপার। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজ প্রাঙ্গণে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী শচীন দেববর্মন, ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জাতীয় পতাকার রূপকার শিবনারায়ণ দাসও এই কলেজের ছাত্র ছিলেন।

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠখ্যাত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ এক শতকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতার ধারক ও বাহক। এই সুখ্যাতির পেছনে রয়েছে কলেজের সুদীর্ঘ সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য। তৎকালীন জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে ১৮৮৬ সালে ‘রায় এন্ট্রাস স্কুল’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৮ সালে মহারানী ভিক্টোরিয়ার রাজত্বের ৫০ বছরের সুবর্ণ জয়ন্তী স্মারক চিহ্ন হিসাবে নাম পরিবর্তন করে ভিক্টোরিয়া স্কুল নামকরণ করা হয়। বর্তমানে স্কুলের নাম ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল।

স্কুলের সাফল্য ও পূর্ব ভারতে ক্রমবর্ধমান উচ্চ শিক্ষার চাহিদা বৃদ্ধি পেলে ১৮৯৯ সালে জমিদার রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে। কলেজের শিক্ষার্থীরা সমাজের সব মহলেই আছেন। শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই। ২০১৭ সালে জাতীয়ভাবে কলেজ পারফরম্যান্স র্যাংকিং অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম সেরা ৫ কলেজ ক্যাটাগরিতেও প্রথম স্থান অধিকার করে ভিক্টোরিয়া কলেজ।

কলেজের সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে শিক্ষক হিসাবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম জিলানী বলেন, যুগের চাহিদার নিরিখে শিক্ষার গুণগত মানে প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক অবকাঠামো ও ডিজিটাল সুবিধার পরিধি আরও বৃদ্ধি পেয়ে প্রিয় এই ক্যাম্পাসটি হোক জ্ঞানচর্চার বাতিঘর এবং সমাজের উন্নয়নের পীঠস্থান। সেই সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পারস্পরিকভাবে সম্পর্কের বন্ধন সুদৃঢ় হোক এবং আর্দশ ও নৈতিকতায় উজ্জীবিত হোক।

১২৬ বছরের পুরোনো এই কলেজের রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। তিতাশ চৌধুরী লিখেছেন, ‘প্রাচীনত্বের বিচারে এই কলেজটি বুড়োদের দলেই পড়ে’। মূলত এই কলেজই ছিল এই অঞ্চলের অন্ধকার যুগের শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির পর এই কলেজের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছিল। ‘ভিক্টোরিয়া’ শব্দটি ছেঁটে ফেলে দেওয়ার চিন্তা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

বর্তমানে কলেজে ১৫৭টি সৃষ্ট পদে ১৭০ জন শিক্ষক পাঠদান করেন। শিগগিরই আরও ৩৩০টি পদ তৈরি করা হবে। যার মধ্যে প্রত্যেক বিভাগে ২ জন অধ্যাপক, ৪ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৪ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৬ জন প্রভাষক থাকবেন। পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক থাকবেন কুড়িজন করে। খুব শিগগিরই আইসিটি বিভাগও খোলা হবে। বর্তমান শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে উচ্চমাধ্যমিক শাখায় দশ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্যও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ঐতিহ্য রয়েছে। আন্তঃকলেজ ক্রিকেট, ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ বা বিতর্ক প্রতিযোগিতা, এমন অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবে এই কলেজ কখনোই পিছপা হয়নি। সমৃদ্ধ ছাত্ররাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও সক্রিয়ভাবে এখানকার শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করেছে।

কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গাজী মুহাম্মদ গোলাম সোহরাব হাসান বলেন, পরিপূর্ণ ক্যাম্পাসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন কলেজের ৫৫তম অধ্যক্ষ হলেন প্রফেসর আবুল বাসার ভূঁইয়া। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর সাত বছর পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এই নির্বাচনের নেতৃত্বে সাহসী ভূমিকায় ছিলেন কলেজ অধ্যক্ষ আবুল বাসার ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বহু জ্ঞানীগুণীর বিদ্যাপীঠে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছি এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের। ২০২৪-এ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি ক্লান্তিকাল সময়ে ভিক্টোরিয়ার অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছি। যে সময়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা। দায়িত্ব নেওয়ার পর পরেই সাত বছর বন্ধ থাকা শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছি।

ভিক্টোরিয়ার অধ্যক্ষ হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়, আমার লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মনোন্নয়ন। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নির্দেশনায় ঐতিহ্যের এই কলেজ আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়নের সিদ্ধান্তও নেওয়া হচ্ছে। ভিক্টোরিয়ার নান্দনিক ক্যাম্পাসের জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা দ্রুত নিরসন ছাড়াও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলো ধাপে ধাপে সমাধান করে শিক্ষার্থীদের একটি যুগোপযোগী আধুনিক ক্যাম্পাস উপহার দেওয়ার লক্ষ্য আমার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়