নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ৪৫ বছর বয়সী এক নারীকে পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে ঘরের ভেতর আটকে জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে ধর্ষণ এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন স্থানীয় রাজগঞ্জ বাজারের ফল ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন (৩৯) ও আইয়ুব খান (৪০)।
ভুক্তভোগী নারী গত ২৭ জুলাই নোয়াখালীর পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এর আগে গত ১ জুন বিকেলে উপজেলার মনপুরা গ্রামের মিজি বাড়ির আবু বক্করের ঘরে এই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, বেগমগঞ্জ উপজেলার দিল্লিলপুর গ্রামের মৃত আবীর আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন তার স্বামীর বন্ধু। প্রায় দুই বছর আগে নগদ টাকার প্রয়োজনে তিনি তার বসতবাড়ির ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। জমি রেজিস্ট্রির আগে রেজিস্ট্রি অফিসে জমির বিক্রিত ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নিজাম উদ্দিন তাদের পক্ষ হয়ে বুঝে নেন। পরে নিজাম উদ্দিন ওই টাকা সাময়িক সময়ের জন্য তার কাছে নিরাপদে জমা রাখার কথা বলে নিয়ে যান। কিছুদিন পর তিনি ও তার স্বামী নিজাম উদ্দিনের কাছে পাওনা টাকা চাইলে, নিজাম উদ্দিন টাকা দিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এভাবে দুই বছর কেটে যায়।
সর্বশেষ টাকার জন্য তারা নিজাম উদ্দিনকে চাপ দিলে গত ১ জুন দুপুরে নিজাম উদ্দিন ভুক্তভোগীকে ফোন করে টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তার শ্বশুরবাড়ি মনপুরা গ্রামের মিজি বাড়িতে যেতে বলেন। এসময় ভুক্তভোগীর স্বামী অন্য বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করায় তিনি একাই ওই বাড়িতে যান।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তিনি ওই বাড়িতে যাওয়ার পর নিজাম উদ্দিন ও একই গ্রামের মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে আইয়ুব খান তাকে আবু বক্করের ঘরে আটকে ফেলেন। এরপর তারা একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে চান, যেখানে লেখা থাকবে যে নিজাম উদ্দিনের কাছে তার কোনো টাকা পাওনা নেই। এতে তিনি রাজি না হলে, তার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে নিজাম উদ্দিন ও আইয়ুব খান তাকে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের ঘটনাটি ভিডিও ধারণ করা হয়। এসময় তিনি চিৎকার করতে চাইলে, তাকে ধারালো ছুরি দেখিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভুক্তভোগী নারী কোনোমতে তাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পালিয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, পরবর্তীতে নিজাম উদ্দিন ও আইয়ুব খান ধর্ষণের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাকে আবারও কুপ্রস্তাব দেন। তাদের প্রস্তাবে ভুক্তভোগী রাজি না হলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ভুক্তভোগী নারী নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, "এই ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত থানায় আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"