আইরিন হক, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: বৈশ্বিক মন্দা এবং গত ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশের পাল্টাপাল্টি আমদানি-রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি ও সংকট তৈরি হয়েছে। গেল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৭ লাখ ৬ হাজার ৫৬২ মেট্রিক টন। এর মধ্যে আমদানি কমেছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য হ্রাসের কারণ হিসেবে আমদানি-রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছে। অন্যদিকে, বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং তারা অচলাবস্থা নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন।
নিষেধাজ্ঞার চিত্র: কোন পণ্য কতটা প্রভাবিত
বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত ৮ এপ্রিল থেকে ভারতের আকাশপথ ব্যবহার করে বাইরের দেশে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এরপর ১৭ মে তাদের আরেকটি নিষেধাজ্ঞায় গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, তুলা সুতির বর্জ্য, প্লাস্টিক কাঠের তৈরি আসবাবপত্র ও ফল জাতীয় পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ, গত ২৬ জুন ভারত পাট ও পাটজাত পণ্য স্থলপথে রপ্তানি বন্ধ করে।
অপরদিকে, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবিতে দেশীয় শিল্প রক্ষার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকার স্থলপথে ভারত থেকে সুতা আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। কিন্তু কাস্টমসের পরিসংখ্যান বলছে, গেল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন পণ্য। এতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েছে ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন।
একইভাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। অথচ গেল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন পণ্য। এতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ মেট্রিক টন।
ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, চলমান পরিস্থিতি এবং একের পর এক নিষেধাজ্ঞা স্থলপথে আমদানি-রপ্তানিকে সংকটের মুখে ফেলেছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, "একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় বাণিজ্যে ধস নেমেছে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।"
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন জানান, অপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্য আমদানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া ভারত সরকারও বাংলাদেশি বিভিন্ন পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করেছে। তিনি আরও বলেন, সবশেষ গত বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ৪৮৬ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে, যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৭৬ ট্রাক।
বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান এই অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন না হলে উভয় দেশের অর্থনীতিতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।