শিরোনাম
◈ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কড়াকড়ি, বিনিয়োগ বাড়াতে ভারসাম্যের খোঁজে বাংলাদেশ ব্যাংক ◈ গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ◈ আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা হাসিনাকে দেশে ফেরাতে, ঢাকায় প্রশিক্ষণ ◈ সাপুড়ের প্রাণ নেয়া সাপটিকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে নিলো আরেক সাপুড়ে ◈ লুইস ‌দিয়াস লিভারপুল ছেড়ে দি‌লেন, চার বছরের চুক্তিতে ঢুক‌লেন বায়ার্নে মিউ‌নি‌খে ◈ রাষ্ট্র মেরামত ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার সুযোগ কোনোভাবেই মিস করা যাবে না: আইন উপদেষ্টা  ◈ দুই ছাত্র উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা: জামিন পেলেন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফারাবী ◈ প্রথম পর্বে ৬২ বিষয়ে ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলো, তালিকা প্রকাশ করলো কমিশন ◈ জামায়াত আমিরের হার্টে তিনটি ব্লক, বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত : ০৪ জুলাই, ২০২৫, ০৭:৫১ বিকাল
আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জুলাই আন্দোলনের এক বছর: বিচার ও সান্ত্বনার অপেক্ষায় পরিবার

"যা হারিয়েছি, তা কোনো বিনিময়েই পূরণ হবার নয়" - শহীদ রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি

শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা: "জুলাই আন্দোলনে যা হারিয়েছি, কোনো কিছুর বিনিময়েই সেই অভাব পূরণ হবার নয়। সরকার যতই অনুদান দিক, যতই সাহায্য-সহযোগিতা করুক, আমার সন্তানদের যতই প্রতিষ্ঠিত করে দিক, তাদের বাবার অভাব কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না।"—কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি আক্তার।

গত বছরের ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন বাসচালক আবদুর রাজ্জাক রুবেল। গুলিবিদ্ধ করার পর তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

হ্যাপি আক্তার বলেন, "আমার ছেলেটা জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। এখন সে 'বাবা বাবা' বলে ডাকে। আমি তাকে বাবার মুখ কোথায় দেখাব? কীভাবে এই শোক ভুলব?"

তিনি আরও জানান, "আমার মেয়েটার বয়স এখন পাঁচ বছর। সে এখনো জানে না তার বাবা কোথায়। স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। যখন দেখে অন্যদের বাবা স্কুল থেকে নিয়ে যায়, তখন বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করে আর বলে, 'মা, আমার বাবা কোথায়? বাবা আমাকে কেন নিতে আসে?' আমি মিথ্যা বলি, 'তোমার বাবা বেড়াতে গেছে।' কিন্তু আর কতদিন এই মিথ্যা সান্ত্বনা দেব?"

এক বছরের শোকের ভার বয়ে বেড়ানো এই নারী বলেন, "বছর ঘুরে জুলাই তো ঠিকই আসছে, কিন্তু আমার স্বামী তো আসলো না। আমি না পেলাম স্বামীকে, না পেলাম স্বামী হত্যার বিচার!"

বিচার নিয়ে হতাশা, অসহায়ত্বের কথা জানালেন পরিবার
রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি আক্তার জানান, "আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। সে বাস চালাতো। গুলি করার পরও যদি তারা থেমে যেত, তাহলে হয়তো সে বাঁচতো। কিন্তু না, তাকে যেভাবে পারা গেছে কুপিয়ে, পিটিয়ে মারা হয়েছে।"

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, "আমার স্বামীর হত্যা মামলার অনেক আসামি এখন জামিনে মুক্ত। পুলিশ ধরছে ঠিকই, কিন্তু আদালত তাদের জামিন দিচ্ছে। তাহলে আমি কি কোনোদিনও স্বামী হত্যার বিচার পাব না?"

হ্যাপি বলেন, রুবেলের মৃত্যুর এক মাস পর তাদের ছেলের জন্ম হয়। "আজ ছেলেটা 'বাবা বাবা' বলে ডাকে। বড় হলে সে যদি বাবাকে খোঁজে, আমি কী জবাব দেব? রুবেল মারা যাওয়ার দুদিন আগে ২৫০০ টাকা পাঠিয়েছিল। তার মৃত্যুর পর সেই টাকা দিয়েই লাশ বাড়িতে এনেছি, দাফন করেছি।"

তিনি আরও বলেন, "সরকার যে সাহায্য করেছে, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলছে। বাচ্চার খাবার, ওষুধ, শাশুড়ির চিকিৎসা, নিত্যদিনের খরচ এর মধ্যেই চালাতে হয়।"

শহীদ রুবেলের মা হোসেনেরা বেগম বিলাপ করতে করতে বলেন, "সন্ত্রাসীরা আমার বুকের ধন কাইড়া নিল। সংসারটা সে আগলাইয়া রাখত। চার মাইয়ার পর এই পোলা হইছিল। ছোটবেলায় ওর বাপ মারা যায়। আমি হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পুত পালছি। কিছু অমানুষ গুলি কইরা, কুপাইয়া, পিটাইয়া আমার মানিক চানরে মাইরা ফেলল! আহারে, আমার পোলার দমটা জানি কেমনে বের হইছে! এক বছর হইছে, আমার রুবেল আর মা কইয়া ডাক দেয় না। রাস্তাঘাটে কত মানুষ দেখি, কিন্তু আমার পোলারে দেখি না।"

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, "মারা যাওয়ার দিন পোলা দুপুরে ফোন দিছিল। কইছিল 'মা, আমি ভাত খাব, হ্যাপীরে কও ভাত বাড়তে।' আমি রাইন্ধা বসে ছিলাম, ভাবছিলাম, আইবো একসাথে খামু। কিন্তু পুত তো আইল না—লাশ হইয়া আইল।"

দ্রুত বিচার দাবি জামায়াতের
রুবেল হত্যার বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, "রুবেল হত্যা মামলার আসামিরা জামিনে বের হয়ে যাচ্ছে। জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্ণ হলেও মামলার চার্জশিট এখনও হয়নি। আমরা জুলাইয়ের সকল হত্যা মামলার দ্রুত বিচার দাবি করছি।"

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অদূরে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি করে, পরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে তারা।

দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত খাঁন জানান, "দেবিদ্বারে গেজেটভুক্ত শহীদের সংখ্যা ৯ জন, আহত আছেন ৪৬ জন। এর বাইরে শহীদ ও আহত যারা রয়েছেন, তাদের যাচাই-বাছাই চলছে। শহীদ পরিবারগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের কবর সংরক্ষণের বিষয়েও পরিবারগুলোর মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়