শিরোনাম

প্রকাশিত : ১১ জুন, ২০২৫, ০৬:১৮ বিকাল
আপডেট : ১২ জুন, ২০২৫, ০৮:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ফরিদপুরে ভ্যানচালক হত্যা মামলায় প্রধান আসামি কৃষকদল নেতা

হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কোরবানীর মাংস নেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় হুমায়ূন কবীর (৪৮) নামে এক ভ্যানচালক হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। 
 
বুধবার (১১ জুন) দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান।
 
এর আগে এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১০ জুন) দিবাগত রাতে নিহতের স্ত্রী শিউলী বেগম (৪৫) বাদি হয়ে ময়না ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আরো অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। 
 
গত ৮ জুন সকালে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে লিয়াকত হোসেন মাস্টারের নেতৃত্বে ভ্যানচালক হুমায়ুন কবীরসহ তার পরিবারের উপর দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করলে পরেরদিন ৯ জুন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুমায়ূন কবীর মারা যায়। 
 
নিহত হুমায়ুন কবির বানিয়াড়ী গ্রামের মৃত মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি তিন মেয়ে ও এক ছেলের জনক। গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেলে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের বাড়ি আনা হয়। পরে বাদ মাগরিব খরসূতি গোরস্থান চত্বরে জানাজা শেষে নিহতের লাশ দাফন করা হয়েছে।
 
মামলা ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বানিয়ারী গ্রামের গ্রাম্যদলাদলি নিয়ে দুইটি বিবাদমান পক্ষ রয়েছে। একটিপক্ষের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য জামাল হোসেন ও উপজেলা পল্লি উন্নয়ন সমবায় সমিতির (বিআরডিপি) সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নবীর হোসেন চুন্নু এবং অপরপক্ষের নেতৃত্ব দেন উপজেলার ময়না ইউনিয়ন জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মাস্টার। গত শনিবার ঈদুল আজহার দিন হুমায়ূন কবীর লিয়াকতের দলে থাকা ভাই-ভাতিজাদের নবীর হোসেন চুন্নুর দলে নিয়ে সেখান থেকে সামাজিক ভাবে বিলি করা কোরবানীর মাংস গ্রহণ করেন। এ নিয়ে ঈদের দিন থেকে ওই গ্রামে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। কোরবানীর মাংসের ভাগ নেওয়ার জেরে গত রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বানিয়াড়ী গ্রামের ছাকেনের চায়ের দোকানের সামনে কৃষক দল নেতা লিয়াকত হোসেন মাস্টারসহ তার সমর্থকদের সাথে আওয়ামী লীগ নেতা নবীর হোসেন চুন্নুর সমর্থক হুমায়ুন কবিরসহ তার পরিবারের সদস্যদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে লিয়াকতরা হুমায়ুন কবিরসহ তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। 
 
এ হামলায় মাথায় ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হুমায়ূন কবীরকে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়। রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল থেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রাখলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৮টার দিকে হুমায়ূন কবীর মারা যান। 
 
এ ঘটনায় আরো আহত হন হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই মোস্তফা মোল্লা (৫৮), তার মেয়ে বেনি বেগম (২৩) ও এক ভাগিনা। তারা বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমান বাড়িতে অবস্থান করছেন। হামলায় নিহত হওয়া হুমায়ূন কবীর নবীর হোসেন চুন্নুর সমর্থক ছিলেন।
 
এ ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নিহতের স্ত্রী শিউলী বেগম (৪৫) বাদি হয়ে ময়না ইউনিয়ন কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত হোসেন মাস্টারকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আরো অজ্ঞাতনামা ১০-১৫জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখন কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলা নম্বর-১১। 
 
বুধবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন,  কোরবানীর মাংস নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভ্যানচালক হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে লিয়াকত মাস্টারকে প্রধান আসামি করে মামলাটি করা হয়। ঘটনাস্থল এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। 
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়