এম আর আমিন, চট্টগ্রাম: [২] কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার যাত্রীদের রেল পরিসেবা গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
[৩] বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) মো. নাজমুল ইসলাম বলেছেন, মিটারগেজ ইঞ্জিন সংকটের কারনে কয়েকটি ট্রেন চলাচল বন্ধ করতে বাধ্য হযেছি আমরা। তবে খুব দ্রত সময়ের মধ্যে এই সংকট কাটিয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে এমন বিবৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
[৪] তিনি আরও বলেন, আমাদের একদিকে আমাদের প্রচুর লোকবল সংকট রয়েছে। সবমিলিয়ে গড়ে ৫০ শতাংশ লোক নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে নিচ্ছি। এর সাথে যোগ হয়েছে মিটারগেজ ইঞ্জিন সংকটে। তবু আমরা দিনে রাতে জনসেবা কন্টিনিও রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্পেশাল ট্রেন বন্ধের ব্যপারে বাস মালিক সমিতি বা অন্যকারো সাথে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমরা তাদেরকে চিনিওনা।
[৫] ইঞ্জিন সংকট একটি জাতীয় সমস্যা, এটির দ্রুত সমাধানের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইঞ্জিন সংকট সমাধান হয়ে গেলে সেবার পরিধি আরো বাড়বে বলেও জানান তিন। একশ্রেণির লোক আছে যারা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা না করে আমাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। তাদের আরো দায়িত্বশীল আচরণের আহবান জানিয়েছেন তিনি।
[৬] নাম প্রকাশ নানকরার শর্তে রেল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রেলে ব্রডগ্যাজ ইঞ্জিন যথেষ্ঠ পরিমানে আছে। সরকারের পরিকল্পনা ছিল সারাদেশে ডুয়েলগ্যাজ লাইন সংযোগ করা, ফলে মিটারগেজ ইঞ্জিন আমদানি করা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সারাদেশে এখনো ব্রডগেজ লাইন সংযোগ করা সম্ভব হয়নি বিধায় এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
[৭] উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে বাতিল করে এই রুটে জনপ্রিয় এই ট্রেন সার্ভিস বহাল রাখার দাবী জানিয়েছে। অন্যথায় এইপথের যাত্রী সাধারণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারী দিয়েছে সংগঠনটি।
[৮] বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার রেলসেবা জনগনের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ নির্মাণের পরে রেল কর্তৃকপক্ষ শুধুমাত্র রাজধানীবাসীকে সুবিধা দেওয়ার মানসে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ২টি ট্রেন সার্ভিস চালু করা হলেও চট্টগ্রাম, দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনগন জমিজমা, ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নদী-নালা, খাল-বিল বিলিন করে রেলপথের জন্য জমি ছেড়ে দিলেও এই ট্রেন সার্ভিস চালুর পর থেকে তারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে যাতায়াতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।
[৯] এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবির মুখে বিগত ঈদুল ফিতরের সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে কক্সবাজার স্পেশাল নামে একটি ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়। সড়ক পথে নৈরাজ্য, সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে যাত্রী সাধারণ যখন সীমিত সুবিধা এই ট্রেনটির প্রতি ঝুঁকছিলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই ট্রেনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে যাত্রী বান্ধাব বাহনে পরিনত হয়। এই জন্য ঈদের পর নিধারিত সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় রেল প্রশাসনের মাঠ জরিপ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রেনটি চলাচলের সময়সীমা দুই দফা বাড়ানো হয়েছে।
[১০] এহেন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রীরা যখন এই ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করছিলেন, তখন বাস মালিকেরা একে একে সকল পরিবহনে যাত্রী সংকট দেখা দিলে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রী প্রতি বাস ভাড়া ১০০ টাকা পর্যন্ত কমিয়ে আনতে বাধ্য হয়। তারপরেও বাসে যাত্রী না পাওয়ায় বাস মালিকেরা রেল প্রশাসনের ঊর্দ্ধতন কর্তৃকপক্ষকে ম্যানেজ করে ফেলেছে বলে এই রুটে যাত্রীদের অনেকেই মনে করেন। তাই বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের জনপ্রিয় ট্রেন সার্ভিস কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন বন্ধ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
[১১] বিবৃতিতে তিনি দাবী করেন, দেশের আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিসগুলোর মধ্য অন্যান্য আন্তঃনগর ট্রেনের তুলনায় ঢাকা-কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে যাত্রী ও আয় বেশি। এছাড়াও এই পথে কয়েক জোড়া রেল চালানো না গেলে বিনিয়োগের কিস্তি উঠানো সক্ষম হবে না। এতে রেল কর্তৃকপক্ষের লোকসানের বোঝা দিন দিন ভারী হয়ে উঠবে। কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে দুটি করে ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষনা দিয়েছিলেন। এই সার্ভিস বন্ধ করা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সুস্পষ্ট লংঘন বলে তিনি দাবী করেন।
[১২] তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথে দুটি আন্তঃনগর ট্রেনে চট্টগ্রামের যাত্রীদের আন্দোলনের মুখে মাত্র একটি এসি ও একটি নন এসি দুটি কোচ বরাদ্দ রাখা হলেও এতে যাত্রীদের চাহিদার শিকিভাগও পুরণ হচ্ছে না। এতে করে এইপথের যাত্রীদের ক্ষোভ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে কোরবানি ঈদের আগে কক্সবাজার রুটে চলমান স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেওয়ায় রেলপথমন্ত্রীর ঘোষিত ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলাচল নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
[১৩] গত ২৮ মে রেলপথমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ঈদুল আযহায় ১০ জোড়া ঈদ স্পেশাল বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষনা দেন। এই ঘোষণায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে এক জোড়া বিশেষ ট্রেন সাভিস ও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাই অনতিবিলম্বে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন সাভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এলাকার যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সম্পাদনা: এ আর শাকিল
প্রতিনিধি/এআরএস
আপনার মতামত লিখুন :