শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ০৫ আগস্ট, ২০২২, ০৪:১৯ সকাল
আপডেট : ০৫ আগস্ট, ২০২২, ০৯:২৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকায় টানা চার দিন থাকছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ছবি: সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই। তারপরেও হোসেনী দালান ও তাজিয়া মিছিল ঘিরে ঢাকায় টানা চার দিন থাকছে তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা। পুরান ঢাকার উর্দু রোডে থাকা হোসেনী দালানে বসানো হয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা। প্রবেশপথে বসানো হয়েছে চারটি আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর। পবিত্র আশুরা ও তাজিয়া মিছিল ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাইবার বিভাগগুলো। ইমাম বাড়ার পাশের কারখানাসহ বাসাবাড়ি ও মেসে তলস্নাশি চালানো হবে। অপরিচিত কাউকে ওই এলাকায় আশুরার সময় অবস্থান না করতে বলা হয়েছে। যায়যায়দিন

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টায় হোসেনী দালানের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে বের হওয়া তাজিয়া মিছিলকে ঘিরে থাকছে বিশেষ নিরাপত্তা। তাজিয়া মিছিল যেসব রাস্তায় যাবে সেসব রাস্তা আগ থেকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। ওইসব রাস্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে। রাস্তার পাশের বহুতল ভবনগুলোর ছাদে বসানো হবে নিরাপত্তা চৌকি। ভবনের ছাদ থেকে বাইনোকুলার দিয়ে পুরো মিছিলের ওপর নজর রাখা হবে। এমন নজরদারি করা হবে হোসেনী দালানের উপরেও।

তিনি আরও বলেন, আচমকা কাউকে মাঝপথ থেকে তাজিয়া মিছিলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এজন্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সর্তক থাকবেন। আগামী ৬ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত চার দিন ঢাকায় থাকবে কঠোর নিরাপত্তা। কন্ট্রোলরুম স্থাপনের মাধ্যমে

পুরো হোসেনী দালানের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। এছাড়া হোসেনী দালানসহ আশপাশের এলাকা ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিজপোটাল ইউনিট দিয়ে তলস্নাশি করা হবে। আশপাশের সব বাসাবাড়ি ও মেসে তলস্নাশি চালানো হবে। ইতোমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ দিকের চারটি প্রবেশপথে চারটি আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, হোসেনী দালানের পশ্চিম পাশের কারখানাগুলোতে থাকা শ্রমিকদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। নতুন করে কোনো শ্রমিক বা কেউ সেখানে চাকরি নিলে বা অবস্থান করলে সে বিষয়ে পুলিশকে আগাম জানাতে হবে। যদিও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা জানানোর আগ থেকেই ওইসব কারখানার ওপর নজরদারি করছে। প্রয়োজনে ওইসব কারখানায় তলস্নাশি চালানো হবে। এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে আগত পুণ্যার্থীদের জন্য পানি ও বিশ্রামের পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়াদের প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হবে। প্রস্তুত রাখা হবে অ্যাম্বুলেন্স।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার (ক্রাইম), সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ (ডিবি) ছাড়াও উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর হোসেনী দালানে বোমা হামলায় একজন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই পুলিশ ওর্ যাবের তরফ থেকে দুইটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করে পুরো হোসেনী দালান মনিটরিং করা হয়। পাশাপাশি হোসেনী দালান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেও গুরুত্ব বিবেচনা করে ২১টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। হোসেনী দালানের পশ্চিম পাশে স্থাপন করা হয়েছে নিজস্ব কন্ট্রোলরুম।

সরেজমিনে উর্দুভাষী অবাঙালিদের বসবাসের মোহাম্মদপুরের জেনেভাক্যাম্পে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত যুবক, যুবতী, কিশোর, কিশোরী ও মাঝবয়সি নারী-পুরুষ তাজিয়া মিছিলের বিশেষ পোশাক পরিধান করে এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন। তারা বলছিলেন, তাজিয়া মিছিলে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদের অনেকেই ছুরি, চাকু, চেইন ও তলোয়ার নিয়ে মাতম করে। তারা মাতমে 'হায় হোসেন হায় হোসেন' বলতে বলতে হাতে থাকা তলোয়ার, ছুরি বা চাকু দিয়ে নিজের শরীরেই নিজে আঘাত করে। এতে করে গা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। এতে তাদের পাপ মোচন হয়।

মোহাম্মদপুর থেকে বের হওয়া তাজিয়া মিছিল আশপাশের এলাকা ঘুরে মিরপুরে অবস্থিত উর্দুভাষী অবাঙালিদের ক্যাম্পে যাওয়ার কথা আছে। মিরপুর আর মোহাম্মদপুরের তাজিয়া মিছিল যৌথভাবে কালশীসহ আশপাশের এলাকা ঘুরবে। এই বিশাল মিছিলটির সঙ্গে যোগ দেবে হোসেনী দালান থেকে বের হওয়া তাজিয়া মিছিল। এরপর সম্মিলিতভাবে তাজিয়া মিছিলটি ধানমন্ডি লেকে গিয়ে শেষ হবে। ধানমন্ডি লেককে তারা প্রতীকী কারবালা প্রান্তর বলে মনে করেন।

পুলিশ সূত্র বলছে, এবারও অন্যান্য বছরের মতো তাজিয়া মিছিলে সব ধরনের জিঞ্জির, দা, ছুরি, তলোয়ার, ঢোল-লাঠি খেলা ও আগুন খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ব্যাগ-পোটলা, টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে মিছিলে আসা যাবে না। অপরিচিত কাউকে ব্যাগ নিয়ে তলস্নাশি ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হবে না। ১২ ফুটের বেশি বড় নিশান মিছিলে ব্যবহার করা যাবে না।

হোসেনী দালানের স্বেচ্ছাসেবী দলের সদস্য ফারহান খান বলেন, মিছিলের ও হোসেনী দালানের স্বেচ্ছাসেবীদের চিনতে আলাদা আলাদা 'আর্মব্যাজ' ব্যবহার করতে হবে। তাদের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছেন। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো স্থাপনা হোসেনী দালান। দালানে প্রবেশের দুইটি লোহার বড় গেট। দেওয়াল লাগোয়া থাকা ২৫টি মেস বন্ধ করে দেওয়ার কথা। আশপাশে থাকা অন্তত শতাধিক ছোট ছোট কারখানা ছুটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। দালান আলোকিত রাখতে উজ্জ্বল আলো সম্পন্ন সার্চলাইট বসানো হয়েছে। হোসেনী দালানে প্রবেশের জন্য নারী পুরুষের আলাদা গেট করা হয়েছে। সেখানে তলস্নাশির পর আর্চওয়ে মেটাল ডিটেক্টরের মধ্য দিয়ে সবাইকে যেতে হবে।

উলেস্নখ্য, হিজরি পঞ্জিকার ১০ মহররম মুসলিম বিশ্বে আশুরা পালিত হয়। এক হাজার ৩৩২ বছর আগে এই দিনে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। প্রতি বছর দিবসটি উপলক্ষে হোসেনী দালান থেকে প্রায় এক লাখ ভক্তের তাজিয়া মিছিল বের হয়। কারবালার রক্তাক্ত স্মৃতি স্মরণে ভক্তরা 'হায় হোসেন-হায় হোসেন' বলে মাতম করে নিজের দেহে আঘাত করে রক্ত ঝরান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়