নিজস্ব প্রতিবেদক: [২] ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক গৃহবধূকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের সময় মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসুস্থ ওই গৃহবধূ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবনের পাঁচতলায় মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা সুবিধাজনক নয়।
[৩] ওই গৃহবধূর নাম হাসনা বেগম (৩৫)। তিনি রাজবাড়ী জেলার সদর উপজেলার নিমতলার বাসিন্দা ইটভাটার দিনমজুর মো. আব্দুল মান্নান ব্যাপারীর স্ত্রী। ওই গৃহবধূর পিতার বাড়ি ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশানগোপালপুর।
[৪] এ ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করেছেন ওই গৃহবধূর স্বামী আব্দুল মান্নান ব্যাপারী।
[৫] গৃহবধূ হাসনা বেগমের স্বামী আব্দুল মান্নান ব্যাপারী জানান, তার স্ত্রী হাসনা বেগম (৩৫) পেটে ব্যাথাজনিত অসুস্থতার কারণে গত ২২ ডিসেম্বর ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে গাইনী চিকিৎসকের নিকট গেলে তার স্ত্রীর আলট্রাসনোগ্রাম, রক্ত, ইউরিনসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। পরে রিপোর্টসহ ওই গাইনী চিকিৎসকের নিকট গেলে ওই চিকিৎসক সবে রিপোর্ট দেখে হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. উৎপল নাগের কাছে রেফার করেন। ডা. উৎপল নাগ তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে বলে জানান এবং দ্রুত অপারেশন না করলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না বলে মত দেন।
[৬] মান্নান ব্যাপারী অভিযোগ করে বলেন, ডা. উৎপল নাগ এসময় বিএসএমএমসি হাসপাতালে অপারেশন করাতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে এবং এই সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই বলে তাদের জানান। এরপর ওই ডাক্তার তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে তাদের শহরের রথখোলায় পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের নিকট অবস্থিত পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং একটু পরেই তিনি ওই হাসপাতালে যাবেন বলে জানান।
[৭] তিনি আরও বলেন, 'ওই দিনই অপারেশনের জন্য ২৬ হাজার টাকা চাওয়া হয়। আমি রাজি হয়ে বাড়িতে কাপড়-চোপড় আনতে যাই, ফিরে আসার আগেই আমার স্ত্রীর অপারেশন করে ফেলেন ডা. উৎপল নাগ। অপারেশনের চার দিন পর আমার স্ত্রীর অপারেশনের ওই জায়গায় ব্যান্ডেস খুলতে গেলে পুজ বের হতে শুরু হয়। এরপর ডাক্তারকে জানালে তিনি বলেন অন্য হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। এখানে রাখতে হলে পুনরায় অপারেশন করতে হবে, তার জন্য এক লাখ টাকা লাগবে। আমার ওই পরিমান টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই বলে জানালে আমার স্ত্রীকে ওইখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে পুনরায় ভর্তি করা হয়। প্রায় এক মাস এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে আমার স্ত্রী।
[৮]অসুস্থ ওই রোগীর পিতা হাশেম মল্লিক বলেন, ডা. উৎপল নাগের কথা মতো তার মেয়ে হাসনাকে পিয়ারলেস প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়ার পর তিনটি পরীক্ষা করা হয় ২৬শ' টাকায়। তারপর সেদিন সন্ধ্যায় তার অপারেশন করা হবে বলে জানান।
[৯] তিনি জানান, সবমিলিয়ে ২৬ হাজার টাকা খরচে তার মেয়ের এপেন্ডিক্স অপারেশন করা হয়। অপারেশনের ৪দিন পর হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়ার সময় মেয়ের অপারেশনের সেলাই কেটে ড্রেসিং করার সময় মলদ্বার দিয়ে মল বের হতে থাকে। বিষয়টি ডা. উৎপল নাগকে জানানোর পর তিনি আবারও অপারেশন করার কথা বলেন এবং সেজন্য আরও এক লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। এরপর অসুস্থাবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
[১০] ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ হাসনা বেগম বলেন, 'ডা. উৎপল নাগ আমার সাথে প্রতারণা করে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভুল বুঝিয়ে তার প্রাইভেট চেম্বারে নিয়ে যান এবং অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করার সময় মলদ্বার নাড়ি কেটে ফেলেছেন। আমার তিনটি মেয়ে রয়েছে। চিকিৎসা ব্যয় জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া মাসাধিককাল চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকায় আমার স্বামীও কর্মহীন। অর্থের অভাবে ওষুধ কিনতে পারছি না।'
[১১] এব্যাপারে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. উৎপল নাগ বিএসএমএমসি হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে হাসনা বেগমকে অপারেশনের পরামর্শ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা নিজেরাই স্বপ্রণোদিত হয়ে পিয়ারলেস হাসপাতালে অপারেশন করিয়েছে। একইসাথে অসুস্থ হাসনা বেগমকে পুনরায় অপারেশন করাতে এক লাখ টাকা দাবির অভিযোগও অস্বীকার করেন।
[১২] ডা. উৎপল নাগ বলেন, ওই রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স পেকে গিয়েছিলো। সৃষ্টিকর্তা তার হাত দিয়ে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। এখন তারা কি কারণে এসব অভিযোগ করছে তা বুঝতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, মলদ্বারের নাড়ি কেটে ফেলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। অ্যাপেন্ডিক্স পেকে গিয়ে ফেটে যায়, সেকারণে মলদ্বারের নাড়িও পেকে ফেটে যায়। ওই সময়ই মল বের করার অন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
[১৩] ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে ওই রোগীর খোঁজখবর নিয়েছি। তার চিকিৎসার কোনো ত্রুটি হবে না। তিনি বলেন, কি কারণে এমন ঘটনা ঘটলো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
[১৪] প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ফরিদপুরের আল-মদিনা বেসরকারি হাসপাতালে নবজাতক প্রসবের সময় নবজাতকের কপাল কেটে ফেলেন ওই হাসপাতালের আয়া। এছাড়া শহরের আরামবাগ হাসপাতালে প্রসবের সময় এক নবজাতকের হাতের হাড় ভেঙে ফেলার ঘটনায় আরামবাগ হাসপাতালের মালিক ও তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী পরিবার।
আপনার মতামত লিখুন :