সোহেল মিয়া : করোনার প্রভাবে বিদেশে পানের রপ্তানি বন্ধ ও স্থানীয় বাজারে পানের দাম কম থাকার কারণে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পান চাষিরা।রাজবাড়ী জেলার উৎপাদিত পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে ৮টি দেশে রপ্তানী করা হতো।কিন্তু করোনা আসার পর থেকে বর্তমানে বিদেশে পান রপ্তানী এখন বন্ধ থাকায় এবং স্থানীয় বাজারে পান বিক্রি করে উৎপাদন খরচ না ওঠায় মুখ থুবড়ে পড়েছে এ উপজেলার পান চাষ।
পান চাষের অনুকুল পরিবেশ, বিদেশে মিষ্টি পানের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পান চাষিদের ভাগ্যের চাকা ঘুড়ছিলো।কিন্তু গত ২ বছর করোনার কারণে চাহিদা কম আর রপ্তানী না হওয়ায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে পান। বর্তমানে দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচও উঠছে না বলে জানিয়েছে এ উপজেলার পান চাষিরা।
জানা গেছে, জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর, বহরপুর, ও বালিয়াকান্দি এই ৩টি ইউনিয়নের ইলিশ খোল, জামালপুর, নলিয়া, আরকান্দি, বালিয়াকান্দি ও বেতেঙ্গাসহ ২৬টি গ্রামের ৬ শতাধিক কৃষক পরিবার একমাত্র পান চাষের ওপর নির্ভরশীল।কিন্তু করোনার কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ ও বাজারদর অপেক্ষা উৎপাদন ব্যায় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে এ উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নের ২৬ টি গ্রামের প্রায় ৬ শতাধিক পান চাষীদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,মিষ্টি পান চাষে উর্বর ভুমি হিসেবে পরিচিত বালিয়াকান্দি উপজেলা।এ উপজেলায় দুই জাতের পান চাষ হয়ে থাকে।একটি হলো মিষ্টি পান ও আরেকটি হলো সাচি পান। উপজেলাতে ৮৮ হেক্টর জমিতে মোট ৮১৪ টি বরজে মিষ্টি পান ও সাচি পানের আবাদ করা হয়েছে।এর মধ্যে মিষ্টি পানর বরজ ৬৫৮টি এবং সাচি পানের বরজ ১৫৬টি।
পান চাষী শ্যামল সরকার বলেন,করোনার আগে পান চাষ করে ভালোই লাভ হতো।কিন্তু করোনা আসার পর থেকেই পানে লোকসান গুনতে হচ্ছে।বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ আছে।এছাড়াও এখন দেশিও বাজারে পানের দাম কম।এ মৌসুমে লাভের আশা করছিলাম। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় জাওয়ায়েদর প্রভাবে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে পানের বরজে পানি উঠে যাওয়ায় অনেক বরজ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।এভাবে চলতে থাকলে পান চাষ ছেড়ে দিয়ে অন্যদিকে ঝুঁকতে হবে।
আরেক পান চাষী আজাদ শেখ জানান,সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থা করলে প্রতি বছর এই খাত থেকে কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। অনেক সময় অধিক সুদে ঋনের কিস্তি পরিশোধে পান চাষীদের বেকায়দায় পড়তে হয়।এছাড়াও পানের বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তারা কোন পরামর্শ দিতে পারে না ফলে পান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।কৃষি বিভাগ থেকে সঠিক পরামর্শ ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া না গেলে সামনে পান চাষিরা পান চাষ থেকে সরে আসবে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন,এ অঞ্চলের পানের সুখ্যাতি বহুদিনের।স্থানীয় বাজরে চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হতো।কিন্তু করোনার কারণে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।তবে আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিদেশে যাতে পুনরায় পান রপ্তানি করা যায় সে চেষ্টা করছি।এছাড়াও আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পান চাষীদেরকে সবসময় পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
আপনার মতামত লিখুন :