শামীম আহমেদ
কয়েকটা জিনিস মাথায় রাখুনÑ [১] পাকিস্তানের কোনো খেলোয়াড় মাঠে ভালো খেললে একজন বাংলাদেশি তার প্রশংসা করতে পারেন, এতে কোনো সমস্যা নেই। ভালো খেলার প্রশংসা করাই স্বাভাবিক। যে কারণে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুসের হাজার হাজার সমর্থক এ দেশে আছে, যেটা আমি স্বাভাবিক বিষয় মনে করি। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলায় পাকিস্তানের সমর্থন কোনো বাংলাদেশি করতে পারবে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে খেলার দিন বাংলাদেশকে রেখে কোনো বাংলাদেশি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সমর্থন করলে আমি বিরক্ত হবো, কিন্তু অত পাত্তা দেবো না, কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে আমার যুদ্ধ হয়নি, তারা আমার ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করেনি, ২ লাখ মা-বোনকে ধর্ষণ করেনি। [২] অনেকে বলেন, খেলার মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পতাকা আনলে তো কিছু বলেন না, পাকিস্তানের পতাকা আনলে বলেন কেন? হ্যাঁ, মনে রাখবেন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পতাকা আনাও গ্রহণযোগ্য নয়, অন্যায়। তবে সেটা অত গায়ে লাগে না, কারণ তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি যুদ্ধ হয়নি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষকে গুলি করে মারেনি, ২ লাখ মানুষকে ধর্ষণ করেনি।
[৩] অনেকে বলেন, অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের মাঠে তো অনেকে বাংলাদেশের পতাকা উড়ায়, তাদের কী হবে? আসলে সেটা তাদের ব্যাপার। তারা দেশ ছেড়ে গিয়ে অন্য দেশে কোন দেশের পতাকা ওড়াবে, সেটা তাদের ব্যাপার, কারণ তাদের অনেকেরই দ্বি-নাগরিকত্ব আছে। তারা একাধারে বাংলাদেশ ও অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা কানাডার নাগরিক। তারা যেকোনো দুইটা দেশের সমর্থন করতেই পারে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড বা ক্যানাডা ইমিগ্রেন্ট প্রধান দেশ, তারা জেনেশুনে বাংলাদেশি বা অন্য দেশের মানুষদের তাদের দেশে নিচ্ছে। তারা জানে এসব ইমিগ্রেন্টদের মনের একাংশ ফেলে আসা দেশেই পড়ে আছে, এটা তাদের জন্য স্বাভাবিক। অন্যদিকে, বাংলাদেশ কোনো ইমিগ্রেন্ট প্রধান দেশ না। বাংলাদেশ ইমিগ্রেসনের মাধ্যমে পাকিস্তানীদের দাওয়াত দিয়ে এদেশে আনে নাই, সুতরাং আপনি চাইলেও বাংলাদেশে পাকিস্তানের পতাকা উড়াইতে পারবেন। [৪] কেউ কেউ আরেকটা ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। সেটা অনেকটা এরকম যে - আপনাদের যদি এতই আপত্তি থাকে তাহলে পাকিস্তানকে দাওয়াত দিয়ে খেলতে আনলেন কেন?
একটা কথা পরিষ্কার মাথায় রাখেন, আমাদের পাকিস্তান নিয়ে আপত্তি না। পাকিস্তান একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, তারা এদেশে আসবে, খেলবে, ব্যবসা করবে, আমরা তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিবো, মেহমানদারি করবো। আপত্তি বাংলাদেশি নাগরিক যারা পাকিস্তানের তাবেদারি করছে তাদের নিয়ে। যারা বাংলাদেশি হয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন করছে তাদের নিয়ে। যারা বাংলাদেশি হয়েও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলায় পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোকে সমর্থন করছে ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের নিয়ে। আমরা গোলাম আযম, নিজামি, সাকাচৌ, কাদের মোল্লার ফাঁসি চেয়েছি কারণ তারা বাংলাদেশি হয়েও পাকিস্তানিদের তাবেদারী করেছে। আজকেও সেই একই তাবেদারদের বিরুদ্ধেই আমাদের আপত্তি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয়।
[৫] অনেকে বলেন, পাকিস্তানে অনেক বাংলাদেশি আছে, তারাও তো খেলার সময় বাংলাদেশের পতাকা ওড়ায়। ভাই, আমি পাকিস্তানে গেছি, ১০ দিন ছিলাম, তাও করাচিতে। ওইখানে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের সময় আটকে গেছে। অনেকে ইচ্ছা করেই থেকে গেছে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে। আমি মনে করি ৫০ বছর পরেও যেহেতু তারা বাংলাদেশে আসেনি, বা আসতে পারেনি, তাই এখন আর তাদের বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানোর দরকার নেই। তারা সুখে শান্তিতে পাকিস্তানে থাকুক। পাকিস্তানের পতাকা ওড়াক, এটাই বাস্তবতা। তারা বাংলাদেশের পতাকা পাকিস্তানে ওড়াবে না, বাংলাদেশে কেউ পাকিস্তানের পতাকা ওড়াবে না। ওড়াইতে হইলে পাকিস্তানের পাসপোর্ট দেখাতে হবে। যে জিনিসটা বারবার মনে রাখবেন বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হইছে। অন্য দেশের পতাকা আর পাকিস্তানের পতাকা এক নয়। পাকিস্তানের পতাকা বাংলার মাটিতে ওড়ানো যাবে না। আলাপ শেষ। জয় বাংলা। লেখক : জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
আপনার মতামত লিখুন :