সুপ্রীতি ধর
পতাকা নিয়ে বহুত কচলানো চলছে। এটা নতুন কিছু না বইলা চুপ করে গেছি। ‘অনেক ছবি’ ফটোশপ করেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ কিছু বুঝে আর না বুঝে ফাল পাড়তেছে। তাছাড়া অতীতে দেখেছি পতাকা আর জায়নামাজের প্রসঙ্গ। এই তারছিঁড়া চেতনাবাজ পাবলিকরাই তখন ‘পতাকার চেয়ে জায়নামাজ বড়’ বইলা সুর তুইলা আমারে প্রায় মারতে এসেছিলো। তারা যে কখন পতাকাকে নিয়ে নাচে, আর কখন জায়নামাজ নিয়ে, সেটা ধরতে পারি না বলেই আমি চুপ। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা, ‘পাকিবীর্য’ বলে যে গাল দেওয়া হয়, কখনো কেউ ভেবেছেন যে সেটা কতোটা ভয়াবহ একটা গালি একজন মানুষের জন্য, যার জন্ম হয়েছে যুদ্ধশিশু হিসেবে? আমরা কি সঠিক সংখ্যাটা জানি কতোসংখ্যক শিশুর জন্ম হয়েছিলো যুদ্ধের পর? তারা কে কোথায় আছে? কেমন আছে? তাদের অপরাধটা কী ছিলো? প্রায় বছরই কেউ না কেউ নিজের মায়ের পরিচয় জানতে যখন দেশে আসে, তখন আমরা জানতে পারি তাদের কথা। কিন্তু নিজে থেকে জানি তো নাই-ই, তার ওপর এ ধরনের শব্দচয়ন করা হয় গালি হিসেবে। ধিক, এই গালিবাজ জাতিকে।
তার চেয়ে অন্য কথা বলি। সৌম্য আর লিটন যে বাদ পড়েছে শুনলাম দল থেকে, সেটা কি কেবলই খারাপ খেলার জন্য? নিজে তাদের জায়গায় থেকে বুঝতে পারি কতোটা চাপ নিয়ে তারা এতোদিন ধরে খেলে আসছে। বিশেষ করে ভারতের বিরুদ্ধে খেলা হলে তো কথাই নেই। আমি তাদের কথা মনে করে দমবন্ধ করে রাখতাম।
শুধু ধর্মীয় কারণে সৌম্য আর লিটন যখন গালি খায়, তখন এই পতাকাবাজদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কই থাকে? আমার তো মনে হয়, সৌম্য আর লিটন বাদ পড়ে পুরো সম্প্রদায়কে বাঁচিয়ে দিয়েছে এই যাত্রায়। যদিও আসমানি কিতাবের বাম্পার ফলন কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছে না, ফলে তা রাখার জন্য বিভিন্ন মন্দির, জমিজমা, বাড়িঘরকেই টার্গেট করা হচ্ছে নানাভাবে, তাতে করে সৌম্য ও লিটনের গালি খাওয়া সম্প্রদায় কতোদিন এই ‘মুক্তিযুদ্ধের সরকারের আমলে’ টিকে থাকতে পারবে, তা সময়ই বলে দেবে। পতাকা নিয়ে তোলপাড় করা জাতি (?) ভিন্নমত, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের যখন নিরাপত্তা দিতে পারে না, তখন দর্শক হওয়া ছাড়া উপায়ও থাকে না। Supriti Dhar-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।