জয়া আহসান
আমি বিরাট কোনো সম্মাননার যোগ্যতায় গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছি, সে রকম করে নিজেকে কখনো ভাবতেই পারিনি। তারপরও দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু সম্মাননা আমাকে জানিয়েছেন, তা নিশ্চয়ই তাদের ভালোবাসার জোরে। কিন্তু যে সম্মাননা ‘প ফাউন্ডেশন’ আমাকে দিলেন, সেটা আমার হৃদয়ের একেবারে গভীরের একটা বিষয়ে। তাদের দেওয়া ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননায় আমি অসম্ভব বিহŸল। মানুষ প্রকৃতির সন্তান। আবার মানুষ প্রকৃতিকে ছাপিয়েও উঠেছে। চেতনা পেয়েছে বলেই আমরা নেহাত জীব হয়ে থাকিনি। আমরা মানুষ হয়ে উঠেছি। আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন অর্জনের জন্য জীবন বাজি রাখি, অন্যকে ভালোবেসে নিজেকে বিলিয়ে দিই, ভবিষ্যতের মানুষের জন্য নিজেকে সংযত রাখি। তাই আমাদের দায়িত্ব আছে। মানুষ হিসেবে প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের এ দায় জন্মগত। আমরা সেটি ভুলে যেতে পারি না। আমরা প্রকৃতিকে ছাপিয়ে উঠেছি, কিন্তু প্রকৃতিকে পার হয়ে যাইনি। সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার দায় আমাদের। পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার একটাই উপায় আমাদের রিপু শাসন করে, আমাদের রাক্ষুসে খিদে কমিয়ে পৃথিবীকে সবুজ করে রাখা।
সবুজ মানে গাছ, প্রাণী আর মানুষের একাকার পৃথিবী। পৃথিবীকে সবুজ করে রাখা, কথাটা শুনতে সহজ, কিন্তু এর দায় অনেক বড়, প্রত্যেকের এবং কঠিন। আমার, আপনার, সমাজের, সরকারের, পৃথিবীর বড় বড় কর্পোরেশনের, বিশ্বনেতাদের। আমাদের কোনো কোনো প্রাণী অরণ্যবাসী। কোনো কোনো প্রাণী নাগরিক, মানুষের মমতার তাদের জীবন বেঁচে আছে। করোনার দুঃসময়ে কুকুরের, বিড়ালের, ঘোড়ার মতো নাগরিক এই প্রাণীদের শোচনীয় দুর্দশা আমরা দেখেছি। আমরা না দেখলে তারা বেঁচে থাকবে না। এখানে আমাদের দায়িত্ব আছে। আমাদের দেশে বাণিজ্যমুখী বন বিভাগ আছে, কিন্তু পরিবেশমুখী প্রাণীমুখী প্রাণসম্পদ বিভাগ নেই। আমি এটি প্রতিষ্ঠার দাবি করছি। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জন্য পৃথিবীকে নিঃশ্বাস ফেলার উপযোগী করে রেখে যেতে চাই, তাহলে পৃথিবীর যে মৃত্যুঘণ্টা ক্ষীণভাবে বাজছে, তার আওয়াজ সবাই কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। ‘প ফাউন্ডেশন’কে ধন্যবাদ। আপনাদের সবাইকে ভালোবাসা। Jaya Ahsan ’র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।