শিরোনাম
◈ সরকারি দপ্তরগুলোতে গাড়ি কেনা ও বিদেশ সফরে কড়াকড়ি: কৃচ্ছ্রনীতির অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা ◈ ২১ বছর বয়স হলেই স্টার্ট-আপ লোনের সুযোগ, সুদ মাত্র ৪%: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা ◈ ঢাকায় একটি চায়না টাউন প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে: আশিক চৌধুরী ◈ তিন বোর্ডে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত ◈ এসএসসির ফল নিয়ে যে বার্তা দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা ◈ সৈক‌তের কা‌ছে দু:খ প্রকাশ ক‌রে‌ছেন ‌বি‌সি‌বির প্রধান নির্বাচক  ◈ ভারত সরকারকে আম উপহার পাঠাল বাংলাদেশ ◈ পুলিশের ঊর্ধ্বতন ১৬ কর্মকর্তা বদলি ◈ কল রেকর্ড ট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি, অপেক্ষায় থাকুন: তাজুল ইসলাম ◈ জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা : প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ০২:৩১ রাত
আপডেট : ১৬ নভেম্বর, ২০২১, ০২:৩১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. মোজাহিদুল হক: আত্মসর্মপণের রাজনীতি ও মৌলবাদীদের আস্ফালন

ডা. মোজাহিদুল হক: সাম্প্রদায়িক অপরাজনীতির সঙ্গে সরকারের আপোস-রফার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো হেফাজতে ইসলামের প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির বাংলা সাহিত্যের পাঠ্যপুস্তকে অনেকগুলো সংশোধনী পেশ করা হয়। হেফাজতের অভিযোগ ছিলো পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা নাস্তিকদের দ্বারা রচিত অথবা হিন্দুত্ববাদের প্রাধান্য আছে, এই কারণে তারা তা বাতিলের দাবি করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বলে দাবিদার আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতের এ দাবি মেনে নেয় পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। ফলে হিন্দু অথবা নাস্তিক এই অভিযোগে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত ও লেখকের অত্যন্ত উৎকৃষ্ট রচনা পাঠ্যপুস্তকের তালিকা থেকে ২৭টি লেখা গ্রহণ বর্জন ও বাদ দেওয়া হয়। পাঠ্যপুস্তক সংক্রান্ত এই ঘটনা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে আওয়ামী লীগ সরকার হেফাজতে ইসলামের কাছে ক্রমাগত আত্মসমর্পণ করে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছে। ২০১৩ সালের ৫ মে এই হেফাজতে ইসলাম আওয়ামী লীগের পতন ঘটানোর জন্য মতিঝিলে জমায়েত হয়ে কী তাণ্ডব করেছিলো। সিপিবি অফিস, বায়তুল মোকাররমের দোকানপাট ও কয়েকটি সরকারি অফিসে আগুন জ্বালিয়ে সরকারের পতন করাতে চেয়েছিলো। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সরকার উদ্যোগ নিয়ে হেফাজতের সঙ্গে আপোস করলো এবং নারীবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক পশ্চাৎপদ হেফাজতে ইসলাম এখন বর্তমান সরকারেরই বন্ধুতে পরিণত হয়েছে।
যে মৌলবাদী ধ্যানধারণা, পাকিস্তানি ভাবাদর্শ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা একদিন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেই মুক্তিযুদ্ধের দেশে এই পরিণাম যে কতো বেদনাদায়ক, তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের দেশে জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ব্যর্থতার কারণেই মৌলবাদের উত্থান এবং গণতন্ত্রের পথ সংকুচিত হওয়ার কারণেই উগ্রপন্থার উদ্ভব ঘটেছে। আরেক মৌলবাদী দল ইশা আন্দোলন ঘোষণা দিয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল অপসারণের। তাদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য পাকিস্তানি আমলের মুসলিম লীগ ও জামায়াতের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ সাড়ে চার দশক পর যখন পেছনে ফিরে তাকাই তখন একটা বড় দীর্ঘশ্বাস পড়ে। লাখ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন যে আকাক্সক্ষা নিয়ে, সেই আকাঙক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। বরং যে অঙ্গীকার ছিলো তা আমরা ভুলে গেছি। গণতন্ত্র হয়েছে নির্বাসিত। সমাজতন্ত্রের বদলে চলছে নিকৃষ্ট ধরনের লুটেরা পুঁজিবাদ। বাড়ছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাকে পরিণত করা হয়েছে বাণিজ্যিক উপাদানে। আর ধর্মনিরপেক্ষতা? সংবিধানে সংযোজিত হয়েছে বটে তবে রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারিত করে রেখে ধর্মনিরপেক্ষতার কতোটুকু অবশিষ্ট থাকে? তার ওপর মৌলবাদের উৎপাত, পাকিস্তানি প্রেতাত্মাদের ঘোরাফেরা, ধর্মীয় ও জাতীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনকে কি আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলতে পারি না? অবশ্যই বলতে পারি আর বলতে হবে। আওয়ামী লীগের বক্তৃতা ছাড়া তাদের আচার আচরণের কোথাও আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে কিছু অবশিষ্ট নেই।
আমাদের দেশের মানুষ হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক, উদারপন্থি ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন। তাহলে কেন এভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি পুনর্জীবিত হলো? সাম্প্রদায়িকতা কেন বিস্তার লাভ করলো? জাতীয়তাবাদী শক্তির বিশ্বাসঘাতকতা ও বাম শক্তির ব্যর্থতাও এর জন্য দায়ী। হিন্দু সম্পত্তি দখলের প্রবল আকাক্সক্ষা শাসক দল আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে সাম্প্রদায়িকতার জায়গায় নিয়ে গেছে। রামুর ঘটনাতে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সবাই জড়িত ছিলো। নাসিরনগর কিংবা মুরাদনগরের ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনও নিষ্ক্রিয় ছিলো। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জন্য ভাবাদর্শগত সহায়তা পায় শাসকগোষ্ঠীর আদর্শহীনতার রাজনীতির কাছ থেকে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম রেখে দেওয়া তেমনি আদর্শহীনতা ও আপোস-আত্মসমর্পণের রাজনীতির বড় উদাহরণ। বিএনপি তো সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ, কিন্তু আওয়ামী লীগও ভাবাদর্শের ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ ও ধর্মীয় মৌলবাদের সঙ্গে ক্রমাগত আপোস করে চলার চেষ্টা করছে। এসবই জঙ্গি মৌলবাদকে উৎসাহিত করছে। যে হেফাজতকে দিয়ে খালেদা জিয়া ইসলামী বিপ্লব করাতে চেয়েছিলো সেই হেফাজতের সঙ্গেই এখন আবার আওয়ামী লীগের দহরমমহরম। যে আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে সেই আওয়ামী লীগই আবার মহান সংসদে স্বাধীনতাবিরোধী শফি হুজুরের জন্য শোক উত্থাপন করে। এটা হলো প্রতিক্রিয়াশীল ভাবাদর্শের কাছে আত্মসমর্পণ। এই আত্মসমর্পণই আজকে মৌলবাদী শক্তিকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাবি উত্থাপনের সুযোগ দিয়েছে। আরব্য রজনীর দৈত্যের মতো মৌলবাদী শক্তিকে কাঁধে তুলেছেন এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের ছুড়ে ফেলে মারবেন নাকি আছড়ে মারবেন। এখন আমাদের প্রয়োজন ৭২ সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন এবং মুজিবনগর সরকারের যে ঘোষণার ভিত্তিতে প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে তার বাস্তবায়ন আন্দোলনে সংগঠিত হওয়া।

ডা. মোজাহিদুল হক’র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়