শিরোনাম
◈ নতুন বিপদের সতর্কতা: প্লেট লকড, জমছে শক্তি—বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প সময়ের ব্যাপার মাত্র ◈ ভূমিকম্পের পর সাগরের বুক চিড়ে যেভাবে জেগে উঠেছিল সেন্টমার্টিন দ্বীপ (ভিডিও) ◈ যেসব এলাকায় শনিবার ৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না ◈ হাসিনার আপিল করার সুযোগ আছে: অ্যাটর্নি জেনারেল ◈ হবু স্বামীর মৃত্যুর দেড় বছর পর সন্তানের জন্ম, মাত্র ৯টি শুক্রাণু নিয়ে ইসরাইলি চিকিৎসকের অবিশ্বাস্য সফলতা! ◈ আ. লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা কাকে ভোট দিবেন, নানা অলোচনা ◈ উগান্ডাকে হারিয়ে নারী কাবা‌ডি বিশ্বকা‌পের সেমিফাইনালে ভারত ◈ পরিচয় জানা গেল পুরান ঢাকায় ভূমিকম্পে নিহত ৩ জনের  ◈ মৃত্যুদণ্ড, নিষেধাজ্ঞা ও পলাতক নেতৃত্ব, নেই অনুশোচনাও—কোন পথে ফিরবে আওয়ামী লীগ? ◈ ঢাকার পুরোনো ভবনগুলোর ৯০ ভাগই বিল্ডিং কোড মানে নাই: রিজওয়ানা হাসান

প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর, ২০২১, ০১:৪১ রাত
আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০২১, ০১:৪১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানবর্দ্ধন পাল: কথাশিল্পের রাজাধিরাজ

মানবর্দ্ধন পাল: নামদার বাদশার মতোই বাদশাহী নাম তাঁর। মোঘল সাম্রাজ্যের যুবরাজ বাবর-পুত্রের মতো হুমায়ূন। হুমায়ূন আহমেদ। সম্রাট হুমায়ুন রাজত্ব করেছেন মধ্যযুগের ভারতবর্ষে আর আমাদের হুমায়ূন রাজত্ব করেছেন বাংলা সাহিত্যের রাজ্যে। জীবদ্দশায় তাঁর রাজত্বকাল ছিলো বিশ শতকের শেষ তিন দশক এবং একুশ শতকের প্রথম দশক। বাংলা সাহিত্যে চার দশকের মসিযুদ্ধের রাজত্বে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কেবল বাংলাদেশে নয়, দেশ-বিদেশ নির্বিশেষে বাঙালি ও বাংলাভাষী পাঠক একালে যেখানেই থাকুন না কেন, হুমায়ূনের বই পড়েননি একথা অবিশ্বাস্য। মুক্তিযুদ্ধোত্তর কথাসাহিত্যে তাঁর মতো পাঠকপ্রিয় ও নন্দিত লেখক আর নেই। একদা বিভূতিভূষণ ও শরৎচন্দ্র ছিলেন বাংলা কথাসাহিত্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। বিশেষত বাঙালি নারীদের প্রিয় লেখক ছিলেন শরৎচন্দ্র।

এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন যে, একজন বাঙালি নারী যদি বলেন, তিনি জীবনে একটিমাত্র উপন্যাস পড়েছেন, তবে তিনি বাজি ধরে বলতে পারেন সেটি শরৎচন্দ্রের কোনো উপন্যাস। এই কথাটি ঘুরিয়ে বলা যায় যে, কোনো বাঙালি তরুণ পাঠক জীবনে একটি উপন্যাস পড়লেও সুনিশ্চিত বলা যায় সেই হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস।

তিনি কেবল ঔপন্যাসিক নন- বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। একাধারে তিনি গল্পকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গীতিকার, সংলাপ-রচয়িতা, কল্পবিজ্ঞান লেখক, কলাম লেখক, শিশুসাহিত্যিক ও ভ্রমণসাহিত্য রচয়িতা। শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও প্রৌঢ়ত্বের মজাদার স্মৃতি নিয়েও তিনি লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই। হুমায়ূন আহমেদের যেকোনো বইয়ের পাঠকপ্রিয়তাই তুঙ্গে। প্রকাশ হওয়া মাত্রই এই পাঠবিমুখতার দেশে তাঁর বই একুশের গ্রন্থমেলায় পাঠকেরা লাইন ধরে কেনে এবং এক মেলাতেই একাধিক মুদ্রণ ও সংস্করণ বের হয়। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ থেকে শেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’- সব ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। মিসির আলী এবং হিমু হুমায়ূনের প্রধান চরিত্র। তাঁর জীবদ্দশায় বইমেলায় দেখেছি তরুণ-তরুণীরা সারি বেঁধে তাঁর বই কেনে। তিনি প্যাভেলিয়ানে উপস্থিত থাকলে তো রীতিমতো হাট জমে যায় একটি অটোগ্রাফ সংগ্রহের জন্য।

পাঠকপ্রিয়তা কোনো লেখকের স্থায়িত্ব এবং সাহিত্যমূল্যের মাপকাঠি কিনা জানি না। তবে তা বিচার করবে মহাকাল। যে নিন্দুকেরা হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসকে ‘অপন্যাস’ বলে নিন্দা করেন তারা পাঠকপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়েই করেন। বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে বাংলা সাহিত্যে পাঠবিমুখতার যে দুর্ভিক্ষ চলছিলো তা একক প্রচেষ্টায় হুমায়ূন আহমেদ সুফলতায় পরিপূর্ণ করেছেন। বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায় তিনি সাহিত্যের ‘শুষ্ক তরুর মূলে বারিসিঞ্চন’ করেছেন। শীতল ঝরনাধারায় সিক্ত করেছেন পাঠকহৃদয়। আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের বরপুত্র তিনি। তাঁর শুভ জন্মদিনে পাঠকদের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই। জয়তু বাংলা কথাসাহিত্যের রাজাধিরাজ
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গ্রন্থকার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়