রফি হক
রাত জাগি বলে খুব ভোরে ওঠতে পারি না। আমার জীবনে আমি ভোর খুব কম দেখেছি। সূর্যোদয়ও কম দেখেছি। সকালে ঘুম থেকে ওঠে লেবুচায়ে চুমুক দিতে দিতে পেইন্টিংয়ের বইগুলো দেখি। অনেক সময় ধরে দেখি। জগতে কতো রকমের শিল্পী যে কতো রকমের কাজ করেছেন! প্রত্যেকের কৌশল ধরন আলাদা আলাদা। আজকাল পারতপক্ষে বাড়ি থেকে বেরোই না। ভিড় এড়িয়ে চলতে বলেছেন ডাক্তার। লিখি, পড়ি। বাইরে তাকিয়ে থাকি। দক্ষিণের দিকটিতে দুটো বড় জায়গায় ঘন গাছপালা। কী সুন্দর সবুজ, বাতাসের ঝাপটায় শাঁ শাঁ করে আওয়াজ তোলে, হেলেদুলে ওঠে গাছগুলোর দিকে চেয়েই থাকি, দেখি। জীবনের কতো স্তব্ধ থিরথিরে দুপুর, ছায়াভরা কতো বিকেল কুষ্টিয়াতে কাটিয়েছি। আমার চারপাশে যেসব সবুজ গাছ, পাতা, শালিক, বুলবুলি, পায়রা হেঁটে বেড়ায়, তাদের কথা লিখতে ইচ্ছা করে, ছোট ছোট ভালোবাসার গল্প সেসব। সেই যে অবনীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, প্রত্যেক মানুষ জন্মের সময় একটি করে সবুজ খাতা পায় বিধাতাপুরুষের হাত থেকে, বেশিরভাগ মানুষেরই খাতাটা হারিয়ে যায় কোনো একসময়। যারটা হারায় না, তার মধ্যে একজন ছোট্ট মানুষের সবুজ মন বেঁচে থাকে চিরকাল। আমিও হারিয়ে ফেলেছি সে খাতাটা। কিন্তু আমার সেই সবুজ মনতো বেঁচে আছে এখনো। আর আমি পুরোনো সব ধরনের জঞ্জাল সরিয়ে খুঁজতে আরম্ভ করেছি সবুজ খাতাটি আজকাল, একেবারেই কি হারিয়ে গেছে? আমার মনে হয় মানুষ তার সারাজীবনে যা যা সংগ্রহ করে, সঞ্চয় করে- তার কিছুই সে হারায় না!
অনেক পরিকল্পনা, অনেক স্বপ্ন। ভাবনা-চিন্তা, অনেক ছবির ছোট ছোট স্কেচ, খসড়া এতোগুলো বছর ধরে করে এসেছি, তার ইচ্ছা চলে যায়নি, বরং বেড়েছে। যে পাখিকে পোষ মানাবার কথা ছিলো অন্তত, বিশ-বাইশ বছর আগে, আজ এতোগুলো বছর পরে এসে ভাবি, যদি পোষ না মানে? নাইবা মানলো! চেষ্টা করতে দোষ কী? আর কিছু না হোক নিজের ইচ্ছামতো বেঁচে থাকাতো যাবে? বার্ট্রান্ড রাসেল নাকি ছিয়াশি বছর বয়সে চীনে ভাষা শিখতে আরম্ভ করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তো সত্তর বছর বয়সে ছবি আঁকতে শুরুই করেছিলেন। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে এই যে আমি এতো মেটেরিয়াল সংগ্রহ করেছি নিজের কাজ করবো বলে, রং, ক্যানভাস, ব্রাশ, পেপারস, প্যাস্টেল, পেন্সিলস, নোটবুক, বই, স্যুভেনির, শতাধিক শিল্পীর জীবনী, ডায়েরি, কতো কী! শেষে কী হবে? করে ওঠতে পারবো কিনা, আমার ক্ষমতায় কুলোবে তো? নিশ্চয়ই কুলোবে। শুরুতো করি। এক জীবনে শেষ করতে হবে কে বলেছে ? এক জীবনে কেউ কি কিছু শেষ করতে পেরেছে কখনো? Rafi Haque-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।