হারুন-অর-রশীদ: নিজের শেষ সম্বল পৈতৃক ভিটে মাত্র ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলেন মো. কুদ্দুস শেখ। এরপর নিজ জেলা রাজবাড়ি ছেড়ে পাশের জেলা ফরিদপুরে বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু এক প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তার সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রমশঃ।
ওই পঞ্চাশোর্ধ কুদ্দুস শেখ (৫৬) বর্তমানে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী পৌরসভার কামারগ্রামে সরকারি কলেজ রোড সংলগ্ন একটি ছোট ঘরে বসবাস করছেন। স্ত্রী ছটু বেগম এবং দশ বছরের এক পুত্র সন্তান নিয়ে কুদ্দুসের অভাবী সংসার। সবজি বিক্রি করে চলছে অভাব মেটানোর যুদ্ধ। এ ব্যবসায় স্ত্রী ছটু বেগমও তাকে সাহায্য করেন। বয়সের কাছে হার মেনে কুদ্দুস শেখ ক্রমশঃই শক্তিহীন হয়ে পড়ছেন। আর বিবর্ণ হয়ে পড়ছে যৌবনে দেখা স্বপ্ন।
ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে কুদ্দুস শেখ নিজ জেলা রাজবাড়ী ছেড়ে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলায় চলে আসেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে। জীবিকার তাগিদে প্রথমে অন্যের বাড়িতে কাজ করলেও এখন সবজির ব্যবসা করে কোন রকমে দুই বেলা অন্নের সংস্থান করছেন। রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার শালিমারি গ্রামে মো. কুদ্দুস শেখ তার পৈতৃক ভিটেটি মাত্র ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করে যে স্বপ্ন নিয়ে তিনি বোয়ালমারীতে এসেছিলেন, ৪০ বছর পরেও সে স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হয়নি। ইচ্ছা ছিল ওই টাকায় এখানে একটি ঘর করে শান্তিতে বসবাস করবেন।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। জমি কিনে দেয়ার কথা বলে ওই টাকা জনৈক প্রতারক আত্মসাৎ করে। বর্তমানে সবজি বিক্রি করে ভাড়া বাসায় থেকে দু'বেলা দু-মুঠো খেয়ে কোন রকমে দিনাতিপাত করছেন। পৌরসভার কামারগ্রামে তিনি ৩'শ টাকায় ছোট একটি কুঁড়ে ঘরে বাস করছেন। সবজি বিক্রি করে কোন রকমে কষ্টে সংসারের ঘানি টেনে নিলেও শেষ জীবনে একটু নিরাপদে নিশ্চিন্তে থাকার আশ্রয় সুদূর পরাহত।
কান্না জড়িত কন্ঠে কুদ্দুস বলেন, রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার শালিমারি গ্রামে বাবার একটুখানি জমি ছিলো। সেটা বিক্রি করে ২১ হাজার টাকা পাই। সেই টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করতে বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চালিনগর গ্রামের একজনকে ওই টাকা দেই। তিনি আমাকে টাকাও দিচ্ছেন না, জমিও কিনে দিচ্ছেন না।
প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কুদ্দুস শেখ তার শেষ সম্বল হারিয়েছেন। এক টুকরো নিজস্ব জমিতে তিনি তার স্বপ্নের বাড়ি করে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের ব্যবস্থা করতে পারবেন কি-না তা একমাত্র সময়ই বলতে পারে।
বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম বলেন, এব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।