শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ১১ অক্টোবর, ২০২১, ০২:৪১ রাত
আপডেট : ১১ অক্টোবর, ২০২১, ১১:৪০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রহমান বর্ণিল: সাহিত্যে নোবেল পাওয়া লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ ৭৩ বছরে বই লিখেছেন এগারোটি

রহমান বর্ণিল: অরুন্ধতী রায়ের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ যখন প্রকাশিত হয় তখন তার বয়স ছত্রিশ বছর। বইটি ‘বুকার’ পুরস্কার জিতেছিলো। এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাওয়া তানজিনিয়ান লেখক আবদুলরাজাক গুরনাহ তার তিয়াত্তর বছরের জীবনে বই লিখেছেন সর্বসাকুল্যে এগারোটি। দশটি উপন্যাস একটি গল্পগ্রন্থ। প্রথম বই ‘মেমোরি অব ডিপার্চার’ যখন প্রকাশিত হয়েছিলো তখন এই শরণার্থী লেখকের বয়স চল্লিশ বছর। অপরদিকে বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিকে পড়–য়া বহু লেখকের বই প্রকাশ হয়ে গেছে চৌদ্দ-পনেরোটি। বিংশ শতাব্দীর শেষাংশে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজ। সাঁইত্রিশ বছর বয়সে প্রকাশিত ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র এই লেখকের তিয়াত্তর বছরের জীবনে মোট সাহিত্যকর্ম তিনটি কবিতাগ্রন্থ। এটুকুতে পেয়েছেন ‘বাংলা একাডেমি’ পুরস্কার। অথচ আমি এমন লেখককেও জানি যার প্রকাশিত গ্রন্থ শতাধিক। কিন্তু পাঠক তো দূরে থাক, দেশের পাঁচ শতাংশ সাহিত্যের মানুষও তাকে চেনেন না। এমনকি তার সঙ্গে আমার পরিচয়ও হয়েছে লেখালেখির কারণে নয়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। অক্ষরজ্ঞান থাকলেই লেখা যায়। কিন্তু লিখতে পারলেই তিনি লেখক নন। ব্যক্তির এক জীবনে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা এবং গড়ে ওঠা একটি স্বাতন্ত্র্য দর্শন, এই দুটির সঙ্গে লেখনি দক্ষতার মিশেলেই তৈরি হয় একটি লেখক সত্তা। এখন উচ্চমাধ্যমিকের চৌকাঠ না পেরোনো কিংবা গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার বয়স না হওয়া একজন মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতায় বা কী! তার জীবনদর্শনই বা কী! অথচ সে প্রকাশ করে ফেলছে একাধারে কবিতা, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ! ‘তাদের দেশ নেই, জাতি নেই, অন্য ধর্ম নেই। দেশ-কাল-জাতি-ধর্ম সীমার ঊর্ধ্বে তাদের সেনানিবাস’। যৌবনের গান প্রবন্ধে নজরুল কথাটি নতুনদের উদ্দেশ্যে বলেছেন। কিন্তু আমার কাছে একজন লেখকের জন্য কথাটি সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়। অথচ এখনকার নিরানব্বই শতাংশ নবাগত লেখকরা তাদের লেখনিতে ধর্মের গ অতিক্রম করতে পারেন না। ব্যক্তির ধর্ম থাকতে পারে, কিন্তু লেখকের ধর্ম থাকা অনুচিত।

সাম্প্রদায়িকতার বেড়ি যার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তিনি লেখক নন, বড়জোর ধর্মপ্রচারক। এখনকার বেশিরভাগ লেখক তৈরি হয় ফেসবুকে। বিষয়টা উদ্বেগের। কারণ ফেসবুকে যারা পাঠক, তাদের বেশিরভাগেরই সাহিত্যজ্ঞান নেই। সাহিত্যজ্ঞান শূন্য পাঠকের প্রশংসায় তারা লেখক হওয়ার পথে অনুপ্রেরণা পেয়ে ফ্লিসন গাঁটের পয়সায় বই প্রকাশ করেন। অথচ লেখক হওয়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কোনোভাবেই ফেসবুক কিংবা ফেসবুকে সাহিত্যজ্ঞান শূন্য পাঠকের প্রশংসা নয়। পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হওয়াই হয়তো ভালো লেখার একমাত্র মানদ নয়, তবুও পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, সাময়িকী, লিটলম্যাগে লেখা প্রকাশিত হলে অন্তত লেখা যে না-লেখকের সীমানা অতিক্রম করে লেখকের লেখায় পরিণত হয়েছে সেটা প্রমাণ হয়। লেখালেখির এই ধাপগুলো আমি অতিক্রম করেছি বহু আগে। সাময়িকী, ম্যাগ, ম্যাগাজিনে বহু লেখা ছাপা হয়েছে। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লেখা ছাপা হয়। তবুও নিজেকে লেখক বলতে অস্বস্তি বোধ করি। সাহিত্য নিছক বিনোদনের উপলক্ষ নয়। মানুষের মনোজগতকে আলোকিত করার উৎকৃষ্ট উপকরণও। নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে যে রচনা, সেটা পাঠকের মনে সাময়িক আলোড়ন হয়তো তোলে, কিন্তু দিন শেষ সাহিত্যে সেটা অমরত্ব পায় না। পাঠক মহলে আনন্দ হয়তো দেয়, কিন্তু সমাজ বিশেষ উপকৃত হয় না। প্রথাগত সংস্কার থেকে সমাজকে উত্তরণের জন্য সাহিত্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম। মানুষের জ্ঞান ভারকে সমৃদ্ধ করার জন্যও সাহিত্যের বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। তাই একজন লেখকের প্রতিটি রচনায় সময়ের কথা বলতে হবে, প্রথাগত সংস্কারের বিরুদ্ধে বলতে হবে, সামাজিক অসংলগ্নতার বিরুদ্ধে মানুষের বোধশক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে।

বিকৃতির নিচে চাপাপড়া ইতিহাসের নিগূঢ়তম সত্য প্রজন্মের মননে বুনে দেওয়ায় হতে হবে একজন লেখকের লেখক সত্তার মূল ব্রত। লেখালেখির বিষয়বস্তু কেবল প্রেম-ভালোবাসার গ অতিক্রম করতে না পারলে বুঝতে হবে লেখকের ম্যাচুরিটি আসেনি। ধর্মের সীমানা অতিক্রম করতে না পারলে তাকে লেখক বলা যায় না। শ’য়ে শ’য়ে বই ছাপিয়ে ফেলাও একজন মানুষের লেখক জীবনের সার্থকতা নয়। একজন লেখক কয়টি বই লিখলো সেটা মোটেও ধর্তব্য নয়, বরং কী লিখলো সেটাই বিবেচ্য। হোক সেটা কম। সংখ্যায় কিছু প্রমাণ করে না। সংখ্যার দিকে নজর দিলে এক জীবনে খুব বেশি হলে কালের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া কাশেম বিন আবু বকর হওয়া যাবে। কিন্তু লেখার সাহিত্যমান থাকলে হয়তো আরো একজন হেলাল হাফিজ, কী জানি বাংলা সাহিত্য একদিন হয়তো আবদুলরাজাক গুরনাহও পেয়ে যেতে পারেন। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়