প্রভাষ আমিন: রাইড শেয়ারিং বেকার সমস্যার এক তাৎক্ষণিক সমাধান। তেমনই এক সমাধান বেছে নিয়েছিলেন কেরানীগঞ্জের শওকত আলী। করোনার আগে তিনি স্যানিটারি সামগ্রীর ব্যবসা করতেন। তা দিয়ে সংসার চলছিলো ভালোই। কিন্তু করোনা আসায় সব তছনছ হয়ে যায়। ৯ লাখ টাকা লস দিয়ে তার পথে বসার উপক্রম হয়। তখন তিনি শেষ অবলম্বন হিসেবে একটি মোটরসাইকেল কিনে রাস্তায় নেমে পড়েন। এটাই তার সংসার চালানোর একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু অ্যাপ কোম্পানির বাড়তি কমিশন আর পুলিশের হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়েছিলেন।২৭ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় পুলিশ তার গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে নেয়। অনুরোধ করেও ফিরে না পেয়ে রাগের-ক্ষোভে নিজের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন শওকত। একজন মানুষ কতোটা ক্ষুব্ধ হলে নিজের বেঁচে থাকার শেষ অবলম্বনটি পুড়িয়ে দিতে পারেন, আমরা কি সেটা একটু হৃদয় দিয় অনুভব করতে পারি। ক্ষুব্ধ শওকত আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলো প্রতি রাইডে ২৫ ভাগ টাকা কেটে নেয়। যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কাজটুকু শুধু করে অ্যাপগুলো। এজন্য তারা এই টাকা কেটে নেয়। অ্যাপে চালালে মামলা দেয় না পুলিশ, কিন্তু অ্যাপে না চালিয়ে যাত্রী বহন করলে মামলা খেতে হয়। অ্যাপের জন্য কেন আমি মামলা খাবো? আমি কি রাস্তায় চুরি করতে নেমেছি?’ শওকত আলীর এই প্রশ্নের জবাব কি দিতে পারবেন পুলিশ, অ্যাপ প্রতিষ্ঠান বা নীতিনির্ধারকরা? শওকত আলীর এই ক্ষোভের আগুন সামনে এনেছে অনেক দিক। ক্ষোভের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘করোনায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সংসার চালাতে ও পেটের দায়ে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় নামি। কিন্তু রাইড শেয়ারিং অ্যাপের কারণে রাস্তায় প্রায় সময় মামলা খেতে হয়। দুই সপ্তাহ আগেও মামলা খেয়েছি। সারাদিন রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে যাত্রী আনা-নেওয়া করি। আর যাত্রীদের সঙ্গে শুধু যোগাযোগ করিয়ে অ্যাপগুলো নেয় ২৫ ভাগ টাকা। অ্যাপে চললে মামলা খাবো না, না চললে খাবো এ কেমন অন্যায়।’
শওকত আলী যেদিন তার মোটরবাইকটি পুড়িয়ে দেন, তার পরদিনই সারাদেশে প্রেসক্লাবের সামনে রাইড শেয়ার চালকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিলো। শওকত আলীর ক্ষোভের সঙ্গে তাদের সম্মিলিত বিক্ষোভের কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি নিছকই কাকতালীয়। তবে শওকত আলীর এই আগুন দেওয়া, তাদের বিক্ষোভকে আরও যৌক্তিক করেছে এবং তাদের বঞ্চনার কথা সবার কানে পৌঁছে দিয়েছে। রাইড শেয়ারের চালকরা অ্যাপ কোম্পানির কমিশন ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, তাদের দাঁড়ানোর জন্য নির্ধারিত জায়গা, আগাম আয়করমুক্ত রাখা এবং শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি চেয়েছেন। শওকত আলীর মতো অনেকে আবার আগ বাড়িয়ে অ্যাপভিত্তিক সেবা তুলে দেওয়ারও দাবি করেছেন। অ্যাপভিত্তিক সেবা তুলে দেওয়াটা কোনো সমাধান নয়। কমিশন যৌক্তিক করতে হবে, দাঁড়ানোর জায়গা দিতে হবে, হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সব মিলিয়ে ঢাকার এই বাস্তবতাকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। তবে শৃঙ্খলার নামে যেন তাদের শৃঙ্খলিত করা না হয়। রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে আইনের কঠোর প্রয়োগ আমরাও চাই। তবে তা যেন মানবিক হয়। শওকত আলীর ক্ষোভের আগুন যেন পুড়িয়ে দেয় এই খাতের সব অনিয়ম, বঞ্চনা আর বিশৃঙ্খলা। লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।