আলী রীয়াজ: বাংলাদেশের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে তার একটি সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে একটি সংসদীয় কমিটি তলব করে ব্যাখ্যা চেয়েছে। এটি একই সঙ্গে বিস্ময়ের এবং উদ্বেগের। কিন্তু এই বিষয়ে দেশের লেখক গবেষকদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সেটাও লক্ষণীয়। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের ‘রামরু’ নামের একটি শীর্ষ স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের চেয়ার অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকীকে সংসদীয় কমিটি ডেকে নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রথম আলোতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলা একটি কথা নিয়ে। ওই সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, ‘রেমিট্যান্স যদি বেশি এসেই থাকে, তাহলে অভিবাসীদের পরিবারগুলো কেন করোনার সামনে দুর্বল হয়ে পড়ল? কেন তাদের ঋণ করতে হলো? তাদের খাবার কমে গেল। বৈদেশিক সঞ্চয়ের পরিমাণ আর প্রবাসীদের বাস্তবতার তথ্যে মিল নেই’।
সংসদীয় কমিটি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। সেটা হতেই পারে।কিন্ত সেজন্য একজন গবেষককে কেনো কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং সংবাদপত্রের ভাষ্য অনুযায়ী ‘দুঃখ প্রকাশ’ করতে হবে কেনো সেটা বোধগম্য নয়। কমিটির ভিন্নমত জানানোর এক‘শ ধরণের উপায় ছিলো।কমিটি যদি এই বিষয়ে প্রকাশ্য শুনানী করতো এবং তাতে অন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে অধ্যাপক সিদ্দিকীকে ডাকতেন তবে সেটাই যথোপযুক্ত হতো।কিন্তু এখন যেভাবে ডেকে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হলো তা ভালো ইঙ্গিত দেয় না। সংসদীয় কমিটি কি গবেষকরা কথা বলার সময় ‘সতর্ক’ থাকুন সেটাই বলতে চাইছে? কথা বলার ওপরে নিয়ন্ত্রণের আইনি ও আইন-বহির্ভূত অনেক ব্যবস্থাই এখন চালু আছে। সাংবাদিতায় এখন সেন্সরশীপের চেয়ে সেলফ-সেন্সরশীপ অনেক বেশি। গণমাধ্যমের মালিকানার ধরণ স্বাধীন মত প্রকাশের অনুকূল নয়। তদুপরি সাইবার স্পেসে কথা বলার পরে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের আক্রমণের ভাষা ও ভঙ্গী সকলের জানা এটা হচ্ছে সেন্সরশীপ ফ্রাঞ্চাইজ করা, ভিন্নমত দমনের কাজটা অন্যের হাতে তুলে দেওয়া যাতে করে সরকার বলতে পারে কাজটা আমরা করিনি। এখন সংসদীয় কমিটি যদি সাক্ষাৎকার বা লেখালেখির জন্য তলব করে ব্যাখ্যা চায় তাতে মনে হয় কমিটিও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এতে করে ভিন্নমত বলে আরকিছু অবশিষ্ট থাকবে না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :