কামরুল হাসান মামুন: সে যদি এই সময়ের না হয়ে ১০০ বছর আগে জন্মাতো?
কামরুল হাসান মামুন: সেলওয়া হোসাইন (Selwa Hussain) নামের এই ব্রিটিশ নাগরিক সবসময় ৬ কিলোগ্রাম ওজনের একটি রুকস্যাক বা ব্যাকপ্যাক পিঠে করে বহন করে চলেন। এই ব্যাকপ্যাকেই আছে তার প্রাণভ্রমরা। এইটা হাতছাড়া হলেই মৃত্যু অবধারিত। ২০১৭ সালে হঠাৎ করে তিনি শ্বাসকষ্ট জনিত অসুস্থতা বোধ করেন এবং এই কষ্টটা এক সময় life threatening হয়ে দাঁড়ায়। দ্রুত তাকে জিপি থেকে এক্সপার্ট এবং তারপরে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। এই ট্রান্সফারগুলো খুব দ্রুত হচ্ছিল কারণ তার অবস্থা দ্রুতই তাকে জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে নিয়ে যায়। এক সময় দেখা যায় তার হৃদযন্ত্র আর পাম্প করতে পারছিল না। তাকে তখন কৃত্রিম হার্ট দেওয়া হয় এবং সেই থেকে সে ওই ব্যাকপ্যাক কাঁধে করে চলেন।
তার এই ব্যাকপ্যাকে আছে একটি ব্যাটারী, একটি ইলেকট্রিক মোটর এবং একটি পাম্প যা বাহিরের বাতাসকে ঠেলে শরীরের ভেতরে থাকা প্লাষ্টিক চেম্বারে যেটা কৃত্রিম হার্ট এর কাজ করে। কল্পনা করুন সে যদি ইংল্যান্ডের নাগরিক বা পশ্চমা কোন উন্নত দেশের নাগরিক না হতো? আমাদের দেশে রাস্তার ট্রাফিক জ্যামের যেই অবস্থা তাতে প্রাথমিকভাবে বাসা থেকে হাসপাতালে নিতে নিতেই হয়ত জীবন শেষ হয়ে যেত। অথবা সে যদি এই সময়ের না হয়ে ১০০ বছর আগে জন্মাতো? বিজ্ঞানের অগ্রগতি আজ কোন পর্যায়ে কল্পনা করা যায়? সেই বিজ্ঞানকে আমাদের দেশ অবহেলা করছে।
মেডিক্যাল সাইন্সের অভূতপূর্ব অগ্রগতির পেছনের ভীত রচনা করে তত্বীয় পদার্থবিজ্ঞান তারপর এক্সপেরিমেন্টাল পদার্থবিজ্ঞান এবং শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং। সেই বিজ্ঞানকে আমাদের সরকার প্রতিনিয়ত অবহেলা করছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ ৫০ বছর হলো অথচ এখন পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়তে পারেনি। এই ব্যর্থতা স্বাধীনতার পর যত সরকার এসেছে সবার তবে যারা যত পরে ক্ষমতায় এসেছে তাদের দায়ের মাত্রাও তত বেশি বেড়েছে। আর এখনতো আমরা উল্টো পথে হাঁটছি। স্কুল কলেজের নতুন কাররিকুলাম করছে সরকার। সেখানে যেই পরিবর্তনগুলো আনা হচ্ছে সেগুলো যদি বাস্তবায়ন হয় তাহলে এই দেশে আর কোনদিন ভালো মানের বিজ্ঞানী বিশেষকরে পদার্থবিদ পাওয়া যাবে না।
কি সেই পরিবর্তন? নতুন নিয়মে সবাইকে ১০টি বিষয় পড়তে হবে। ১০টি বিষয়ের মধ্যে পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও রসায়ন এই তিনটি বিষয়কে এক করে একটি বিষয় অর্থাৎ বিজ্ঞান হিসাবে পড়ানো হবে। নতুন প্রস্তাবিত কারিকুলামে উচ্চতর গণিত বলতে কিছু থাকবে না। থাকবে কেবল সাধারণ বিজ্ঞান এবং সাধারণ গণিত। এই সাধারণ বিজ্ঞান এবং সাধারণ গণিত পড়ে এই শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চ মাধ্যমিকে সাইন্স নিয়ে পড়তে যাবে তার অবস্থা বুঝতে পারছেন?
কারিগরি বোর্ড থাকা সত্বেও কারিগরি বিষয় থাকা ভুল না? ১০টি বিষয় থাকলেও পরীক্ষা হবে কেবল ৫টি বিষয়ে সেটা ভুল না? বাঙালি পরীক্ষা না থাকলে কিছু পড়বে? ইন ফ্যাক্ট, স্ট্রাকচারাল এডুকেশনে সারা পৃথিবীতেই পরীক্ষা আছে। নতুন পদ্ধতির আরেক বড় ভুল হলো বিজ্ঞান শেখানোর আগে প্রযুক্তি শেখানো। জোর দেওয়া হয়েছে স্কিল এবং কিছু করে খেতে পাড়ার শিক্ষা। মূল ধারার শিক্ষাকে কি আমরা ভোকেশনাল বা টেকনিক্যাল কিংবা কারিশিক্ষায় নামিয়ে নিয়ে আনবো? বিভাগ উঠিয়ে দিয়ে সব কম্পালসরি করে আগে যতটুকু স্বাধীনতা ছিল সেটাও ছিনিয়ে নেওয়া হলো। পৃথিবীর কোথায় আছে নবম থেকে সবাইকে একই বিষয় পড়ানোর বাধ্যবাদকতা? এই জ্ঞান নিয়ে যেই শিক্ষার্থীরা একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান পড়তে যাবে সেতো কাপুত (kaputt) হয়ে যাবে।