অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: Ancestral এর বাংলা অর্থ হলো বংশানুক্রমিক। বংশানুক্রমে আমরা কী কী পেতে পারি? পৈতৃক বা মাতৃক জায়গা, জমি, সম্পত্তি ইত্যাদি স্থাবর-অস্থাবর পেতে পারি। এছাড়াও এমন কিছু পাই যেমন, উঘঅ DNA script ধরা যায় না, দেখা যায় না বা ছোয়াও যায় না। এই সম্পত্তির ফলে আমাদের কিছু জেনেরিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট জন্মায় যা মোচন যোগ্য নয়। কুকুর বিড়ালের প্রজাতি আছে এবং প্রজাতিভেদে তাদের জেনেরিক আচরণ ভিন্ন হয়। যেমন border collie নামে এক প্রজাতির কুকুর আছে যারা প্রচণ্ড ওয়ার্কহোলিক হয়। সকল কুকুরের প্রভু ভক্তি হলো কুকুরের জেনেরিক আচরণ কিন্তু জার্মান শেফার্ড প্রজাতির কুকুরের প্রভুভক্তি এমন যে সে মনিবের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে একটুও কার্পণ্য করবে না। বিশ্বখ্যাত সাইন্স জার্নালের একটি আর্টিকেলে বলছে যে ‘these findings may shed light on human behaviors as well’! তাহলে ‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হউক ভালো’ এইটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবো। এই কথাটিও সত্য তবে শতভাগ সত্য না। মানুষের আচার আচরণ কেবল বংশানুক্রম দ্বারাই নির্ধারিত হয় না।
মানুষ প্রচণ্ড সামাজিক জীব। প্রাণীদের মধ্যে মানুষ সফল এবং এই সফলতার পেছনে মানুষের সামাজিক বন্ধন রীতিনীতি ইত্যাদিও দায়ী। এইগুলোও এক জেনারেশন থেকে পরের জেনারেশনে pillow passing এর মত পাস হয়। তথাপি আমাদের জন্মটা কোন পরিবারে সেটারও একটি প্রভাব আছে কারণ প্রত্যেকের সেই পরিবারটিই প্রত্যেকের জীবনের প্রথম স্কুল সেই স্কুলের শিক্ষক হলো মূলত ওই পরিবারের সদস্যরা। পৃথিবীর সকল প্রাণীর একটি প্রধান বৈশিষ্ট হলো সকলেই সন্তান জন্ম দানের এর মাধ্যমে বংশানুক্রম বাঁচিয়ে রাখতে চায়। অর্থাৎ এর মাধ্যমে যেন নিজেকে এবং নিজের লিগেসি পৃথিবীতে রেখে যেতে চায়। আমিতো আমার দাদার বাবার নামও জানি না। তেমনি আমার গ্র্যান্ড চিলড্রেনের সন্তানেরাও হয়তো আমার নাম জানবে না unless আমি এমন বড় কেউ না হই যেই নাম ভাঙিয়ে তারা কিছু ফায়দা পাবে। যারা বংশানুক্রমে প্রাপ্ত কিছুর ফায়দা ব্যবহার করে তারা কখনো যে সেই ফায়দা উৎপন্ন করেছে তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। যেই মুহূর্তে মানুষ বাপ, মা কিংবা স্বামী অথবা স্ত্রীর সুনামকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটে তারা কখনো সেই মানুষটিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। তারা সব সময় সেই মানুষটির ছায়াতেই বেড়ে উঠে। তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় সেই মানুষটিকে গ্লোরিফাই করা।
যাকে ব্যবহার করে তাকে যত গ্লোরিফাই করা যায় ফায়দার পরিমাণ ততো বেড়ে যায়। এই ফায়দাটিও বংশানুক্রম চলে। যারা ফায়দা বংশানুক্রম ব্যবহার করে সেই বংশ সাধারণত বর্ধনশীল হয় না বরং ক্ষয়িষ্ণু বা decaying হয়। যা আমি আমাদের চারপাশে দেখছি। বংশানুক্রম বাঁচিয়ে রাখার শ্রেষ্ট উপায় হলো জ্ঞান সৃষ্টি করে রেখে যাওয়া। যেমন করেছেন গ্যালিলিও, আইনস্টাইন, হকিং প্রমুখ। গবেষক যারা, লেখক যারা তারা সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে লিগেসি রেখে যায় যা সন্তান রেখে যাওয়ার চেয়েও অনেক বড়। অন্যভাবেও বেঁচে থাকা যায়। মানুষের জন্য ভালো কাজ করে যাওয়া। সেটা হতে পারে একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে যাওয়া। যেমন প্রফেসর আব্দুস সালাম করে গেছেন, যেমন হোমি ভাবা কিংবা জমশেদ টাটা করে গেছে। লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়