নিউজ ডেস্ক: পরিস্থিতি কিছুটা সামলে উঠলেও বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতি সামনে চলে আসছে। দীর্ঘ সময় চলা করোনা মহামারির প্রভাবে ব্যাংকঋণের কিস্তি, সুদ ও ভ্যাট পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না উদ্যোক্তাদের। যুগান্তর
ইতোমধ্যে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ঋণের কিস্তি দিতে অপারগতা জানিয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প খাতের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সরকারের কাছে সুদসহ কিস্তি স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
একইভাবে বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলের উদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধের মেয়াদ আরও ৩ বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। আর চলমান পরিস্থিতি সামাল দিয়ে টিকে থাকতে প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ সহায়তা সরকারের কাছে চেয়েছেন পোলট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারা। ছোট-বড় রেস্তোরাঁর মালিকরা ভ্যাটের হার ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছেন।
করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় লোকসান মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠন আলাদাভাবে এসব প্রস্তাব দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (বাজেট) সিরাজুন নুর চৌধুরী বলেন, বিজিএমইএ থেকে প্রণোদনা ঋণের কিস্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পেয়েছি। এর আগেও তারা প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিকেএমইএ-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. হাতেম বলেন, পোশাক শিল্পের সব ধরনের ব্যাংকঋণের কিস্তি কাটা ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দিতে ব্যর্থ হলে যেন খেলাপি না করা হয়। পাশাপাশি ঋণের সুদ স্থগিত করার সুপারিশও করা হয়েছে। কারণ, সুদ স্থগিত না করলে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। দীর্ঘদিন পর এ খাতে নতুন অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তৈরি হবে মালিকদের।
সূত্রমতে, অর্থমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্যেও শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা চলমান রাখা হয়েছে। উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য আগের অবস্থায় ফিরে না আসায় এই খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বর্তমানে সব ধরনের ঋণের বিপরীতে নির্ধারিত সময়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
সেখানে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাস অতিমারির প্রভাব মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি ও সক্ষমতা, শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ধরে রাখতে ডিসেম্বর পর্যন্ত যেন ঋণ শ্রেণিকরণ না করা হয়। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতায় পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে লেখা বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প খাতের মূল বক্তব্য হচ্ছে-করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে গত মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকে। এ সময় আরও গভীর সংকটের মুখে পড়ে তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পর্যটন, হোটেল-রেস্তোরাঁ, পোলট্রিসহ বিভিন্ন খাত। এ সময় বিদেশি ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া রপ্তানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সময় নিচ্ছে। অধিকাংশ ক্রেতা সময়মতো মূল্য পরিশোধ করছেন না। নির্দিষ্ট সময়ে পেমেন্ট না পাওয়ার কারণে শিল্পে তারল্য সংকট ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে ছোট-বড় শিল্পের ভবিষ্যৎ, বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। তাই এই সংকটকালীন ব্যাংকঋণের কিস্তি দিতে কেউ ব্যর্থ হলে খেলাপি যাতে না করে।
বাংলাদেশ স্পেশাল টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ শামীম রেজা সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।
সেখানে তিনি বলেন, বিশ্ব মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে ঋণগ্রহীতারা নিজের জীবন অতিবাহিত করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের পক্ষে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যাংকঋণ পরিশোধ করা অত্যন্ত কষ্টকর। ফলে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা ৩ বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেন তিনি।
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, করোনাকালীন সরকার এ খাতের রুগ্ণ শিল্পকে ১ এবং ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পরিশোধের সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু বন্ধকি সম্পত্তির কোনো ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না এই মহামারিতে। যে কারণে ইচ্ছা থাকলেও সম্পত্তি বিক্রি করতে না পারায় অনেকে এই সুবিধা নিতে পারছেন না।
এদিকে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফিরোজ আলম সুমন সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন।
একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে পোলট্রি খাতকে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প অ্যাসোসিয়েশন।
ওই চিঠিতে বলা হয়, চলমান করোনায় এ খাতের অবস্থা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। টিকতে না পেরে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এ শিল্প কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। এই মহামারিতে টিকে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নির্ধারিত সুদে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, ‘প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনাভাইরাসজনিত কারণে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। তবে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষতি যুক্ত হলে এই অঙ্ক আরও বাড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :