ইফতেখার আলম: [২] মাঝারি কিংবা তীব্র বাতাস হলেই বাড়ছে নদীর স্রোত, তৈরি হচ্ছে ঘুর্ণিপাক। আর এই পাকের কারণেই ক্রমান্বয়ে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে গোদাগাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর দেওপাড়া ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের নিমতলী গ্রাম। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় কোনভাবেই থামছে না নদীভাঙ্গন। এতে অনেকটায় আতঙ্ক ও হতাশা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তীরবর্তী বাসিন্দারা।
[৩] গত বুধবার (২৫ আগস্ট) গোদাগাড়ীর ৭ নম্বর ইউনিয়নের দেওপাড়া নিমতলী গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি কিংবা মৃদু বাতাসে হলেই নদীতে স্রোতের সৃষ্টি হচ্ছে, আর তাতেই নদীতে শুরু হচ্ছে ঘুর্নিপাক। এই সৃষ্ট পাকের কারণে ভেঙ্গে পড়ছে নদীপাড়ের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। পদ্মার নদীভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক সেখানে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগভর্তি বালি। তারপরও যেনো থামছে না প্রাকৃতিক বিপর্যয়। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিঘা বিঘা আবাদী জমি ও বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই হয়েছেন নি:স্ব। পশ্চিম পাশে একটি প্রাইমারি স্কুলও অপেক্ষায় রয়েছে পদ্মায় তলিয়ে যাওয়ার।
[৪] পাউবো সূত্র বলছে, গত ১৭ আগস্ট তারা জানতে পারেন ৭ নম্বর গ্রোগ্রাম ইউনিয়নের নিমতলী গ্রামের নদীভাঙ্গনের কথা। অত:পর গত ১৮ আগস্ট থেকে জিও ব্যাগভর্তি বালি ফেলে সাময়িকভাবে নদীভাঙ্গন প্রতিরোধ চেষ্টা করা হয়। পাউবোর ভাষ্য, গত ১৮ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্তা জিও ব্যাগে বালি ফেলা হয়েছে। সেখানে নদীভাঙ্গন রোধে প্রায় ১০ হাজার বস্তা ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। তবে সেটি নদীভাঙ্গনের ওপর নির্ভর করবে বলেও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গোদাগাড়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন সার্ভেয়ার পর্যবেক্ষণ করছেন জিও ব্যাগভর্তি বালি ফেলার কাজ তদারকিতে।
[৫] আদিবুল হাসান দিপু (৩৮) নামের এক স্থানীয় যুবক জানান, প্রায় ২৩ বছর যাবত এদিকে কোনো নদী ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়নি। তবে এবার বর্ষার শুরুর দিকে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলে জানানো হয় জনপ্রতিনি স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের কিন্তু তারা কেউই প্রথমার্ধে নদীভাঙ্গনে তেমন আগ্রহ দেখায়নি। এতে ৭ নম্বর দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমতলী গ্রামটির প্রায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার নদী তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়।
[৬] নিমতলী গ্রামের বাসিন্দা মুস্তাকিম (২৩)। ব্যক্তিগত মালিকানা থাকা আড়াই বিঘা জমি লিজ নিয়েছিলেন চাষাবাদের জন্য। লাগিয়েছিলেন কেশর আলু, পেয়াঁজ, মরিচ। সবই গেছে নদীগর্ভে।
এনিয়ে কথা হয় ০৫ নম্বর দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, গত তেইশ চব্বিশ বছরে এই এলাকায় কোনো ভাঙ্গন ছিল না। তবে এবারের ভাঙ্গন টা আকস্মিক হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ বস্তা ফেলা উচিত তা ফেলছে না। এপর্যন্ত শুনেছি ৫ হাজার বালির বস্তা ফেলেছে। কিন্তু তাতেও সন্দেহ আছে, কারণ ইউনিয়ন পরিষদের কোনো প্রতিনিধিকেই সেখানে রাখা হয়নি। তারা নিজেরা নিজেদের মতন কাজ করছে।
[৭] গ্রামবাসীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, নদীভাঙ্গন শুরু পরপরই আমরা স্থানীয় জনপ্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছিলাম। তারাই কোনো পদক্ষেপ সময়মতো নেয়নি। যার কারণে এলাকাবাসী আমাদেরকেই উল্টো দুশছেন বলে জানান তিনি।
[৮] নদীভাঙ্গন প্রসঙ্গে পাউবোর সাব এ্যাসিসট্যান্ট ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার মো. রিফাত করিম বলেন, এই এলাকায় তিন থেকে চার কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙ্গন প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা আগে থেকে ছিল না। গত ১৭ তারিখ জানার পরপরই তা আমাদের পাউবোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানানো হয় এবং তদপ্রেক্ষিতে এই এলাকায় নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন। দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে এই এলাকায় ১০ হাজার বস্তা জিও ব্যাগে বালি ফেলার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণপূর্বক কাজ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫ হাজারের বেশী বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও নদীভাঙ্গন রোধ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।