সোহেল মিয়া: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াই নদীর ভাঙন থেকে বাঁচতে চায় শতশত মানুষ। প্রতি বছরই গড়াই নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়ছে এ সকল অসহায় মানুষ। ভিটেবাড়ী ও ফসলি জমি হারিয়ে এখন অনেকেই নি:স্ব। পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটছে সীমাহীন দুর্ভোগে। অনেকেই নদীর পার থেকে সরে যাচ্ছেন অন্যত্রে। ঘর-বাড়ী ভেঙে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য তারা নতুন ঠিকানায় আবাস গড়ছেন। কিন্তু যাদের যাওয়ার জায়গা নেই তারা শেষ পর্যন্ত নদীর পারেই থেকে যাচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
গড়াই নদীর ভাঙনরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন নজরদারিই নেই বলে অভিযোগ করেছেন ভাঙন কবলিত ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধি। তাদের দাবি- প্রতি বছরই ভাঙছে গড়াই নদী। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করছেনা। বারবার বলার পরেও পানি উন্নয়ন বোর্ড নারুয়াতে কোন ভ্রুক্ষেপই দিচ্ছেনা এমনটাই অভিযোগ করেছেন নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
আর স্থানীয়দের এই অভিযোগ অস্বীকার করে রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন- গড়াই নদীর ভাঙনরোধে আমরা কাজ করেছি এবং এখনো কাজ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে গড়াই নদীতে ভেঙে যাওয়া জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামে ১৪ লাখ টাকার বেড়িবাঁধ নিমার্ণ করা হয়েছে এবং এখনো কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিন নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গড়াই নদীর ভাঙনে এরই মধ্যে কোনাগ্রাম-মরাবিলা সংযোগ সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও কয়েক দিন আগে গড়াই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে মরাবিলা গ্রামের ফসলি জমিতে পানি ঢুকে গেছে। তাছাড়া নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে অনেকেরই বসতভিটার কাছে চলে এসেছে।
গড়াই নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ সকল সাধারণ অসহায় মানুষ পাটকাঠি, বাঁশ ও আবর্জনা নদীর কূল দিয়ে রেখেছে। আর ফসলি জমিতে যাতে পানি ঢুকতে না পারে সেজন্য তারা মাটি দিয়ে পানির গতিপথ রোধ করার ব্যর্থ শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর পরই তারা নজরদারিতে রাখছেন।
মরাবিলা গ্রামের বাসিন্দা এলেম শেখ, তাজউদ্দীন মন্ডল ও বেলায়েত মন্ডল বলেন, রাতে ঘুমাতে পারিনা। ভয় হয় কখন যেন নদী গ্রাস করে নিবে আমাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু। প্রতি বছরই নদীতে পানি বৃদ্ধি ও কমে যাওয়ার সময় তীব্র ভাঙন দেখে দেয়। ভাঙন দেখা দিলেও দেখা মেলেনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
নারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুস সালাম বলেন, প্রতি বছরই গড়াই নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নারুয়ার বেশ কয়েকটি গ্রাম। বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিষয়টি অবগত করলেও তারা কার্যকরি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননা। এটা খুবই দু:খজনক। নারুয়ার মানুষ এখন ভাঙনের কবলে দিশেহারা।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, গড়াই নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। এরই মধ্যে গড়াই নদীতে ভেঙে যাওয়া জঙ্গল ইউনিয়নের পুষআমলা গ্রামে ১৪ লাখ টাকার বেড়িবাঁধ নিমার্ণ করা হয়েছে এবং এখনো বেশ কয়েকটি জায়গাতে কাজ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে নারুয়ার জামসাপুর ও জঙ্গলের আগপোটরাতে জিও ব্যাগের কাজ চলছে।
নারুয়ার মরাবিলা গ্রামের ভাঙন সম্পর্কে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, জানেন তো করোনার কারনে বাজেটে কিছুটা শীথিলতা রয়েছে। অল্প বাজেটে কাজ করলে তেমন কোন কাজে আসবেনা। তাই মরাবিলা ভাঙনরোধের জন্য একটি বাজেট চেয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বাজেট বরাদ্ধ হলেই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।