শিরোনাম
◈ ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ◈ সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে: মির্জা ফখরুল ◈ বাংলাদেশের রাজনীতির অবনতি দুঃখজনক: পিটার হাস ◈ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়লো ১০ টাকা  ◈ নির্বাচনি ইশতেহারের আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের আহবান শিল্পমন্ত্রীর  ◈ প্রচণ্ড গরম থেকেই ঘটতে পারে মানবদেহের নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকি ◈ অবশেষে রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি  ◈ ইসরায়েল পাল্টা হামলা করলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জবাব দেবে ইরান: উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ মিয়ানমারের আরও ১৫ সেনা সদস্য বিজিবির আশ্রয়ে ◈ সয়াবিনের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ জুলাই, ২০২১, ০১:০৯ দুপুর
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০২১, ০১:০৯ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

য‌শো‌রের চৌগাছায় ৩৫ হেক্টর জ‌মি‌তে চাষ হ‌চ্ছে বি‌দে‌শি ফল ড্রাগ‌নের

র‌হিদুল খান : যশোরের চৌগাছায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে অধিক লাভজনক ফল ড্রাগন। একসময় শখের বশে বাড়ির আঙিনা বা ঘরের ছাদে ড্রাগন লাগানো হলেও বর্তমানে তা বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। অধিক ব্যয়বহুল এই ফল চাষে সরকারি সহযোগিতা পেলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে তা বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চাষিরা।

ধান, পাট, ভুট্টা, গমসহ সবধরনের ডাল আর সবজি চাষে বরাবরই বিখ্যাত সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছা। সময়ের ব্যবধানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আম, পেয়ারা, কুলসহ বেশ কিছু ফলের। বর্তমান সময়ে সব থেকে আলোচিত ও লাভজনক ফল ড্রাগনের চাষ শুরু করেছেন এ জনপদের চাষিরা। এক একজন কৃষক ১ বিঘা থেকে ১০/১২ বিঘা পর্যন্ত চাষ করেছেন বিদেশি এই ফলের। ইতোমধ্যে অনেকেই হয়েছেন স্বাবলম্বী। আবার অনেক চাষি স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছাতে এ পর্যন্ত ৩৫ হেক্টর জমিতে ভিয়েতনাম জাতের ড্রাগন চাষ হয়েছে।

১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় কমবেশি চাষ হলেও হাকিমপুর, পাতিবিলা, জগদীশপুর ও নারায়নপুর ইউনিয়নে এর চাষ বেশি হচ্ছে। সরেজমিন চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা, হয়াতপুর, মুক্তদাহ, নিয়ামতপুর, পেটভরা, হাজরাখানা, নারায়নপুর, বড়খানপুরসহ বেশ কিছু গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় বিঘার পর বিঘা জমিতে ইট, লোহা, সিমেন্টের তৈরি খুঁটি আর ছোট যানবাহনের টায়ারের ওপর লতা আকৃতির ড্রাগন গাছ শোভা পাচ্ছে। কিছু গাছে ফুল ফুটার উপক্রম, আবার অনেক গাছে ধরেছে কাঙ্খিত ফল সেই ড্রাগন।

বাগান পরিচর্জায় ব্যস্ত পাতিবিলিা গ্রামের ড্রাগন চাষি শাহাবুদ্দিনের সাথে কথা হয়।

তিনি জানান, ড্রাগন ফল এ অঞ্চলের কৃষকের কাছে নতুন একটি ফসল। অল্প কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে, ড্রাগন চাষ করে অনেকেই বলাচলে এখন লাখোপতি হয়েছেন। তিনি পাতিবিলা মাঠে প্রায় ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন বাগান গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি গাছে ফুল আর ফলে ভরে গেছে। ইতোমধ্যে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পেরেছেন। দীর্ঘ মেয়াদি এই ফল চাষ করে তিনি স্বাবলম্বি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর।

নারায়নপুর গ্রামের আবু সাঈদ রাজু। পৌরসভায় স্বাস্থ্য সহকারী পদে কর্মরত আছেন। এই চাকুরিজীবী নিজের এক বিঘা জমিতে তৈরি করেছেন ড্রাগন বাগান। আগামী মৌসুমে তার বাগান থেকে ফল বিক্রি শুরু হবে বলে তিনি জানান। একই গ্রামের কৃষক সহিদুর রহমান বাদশা। তিনি ২০১৬ সাল থেকে ড্রাগন চাষ করে আসছেন। বর্তমানে তার ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগন আছে। প্রথম দিকে ড্রাগনের বাজার দর ভাল পেলেও এখন কিছুটা কম বলে তিনি জানান।

সিংহঝুলী গ্রামের আল হেলাল খান ওর‌ফে মিঠু নারায়নপুর গ্রামের মাঠে ১৫ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগনের বাগান। একই ভাবে বড়খানপুর গ্রামের কৃষক সেলিম রেজা সাড়ে ৬ বিঘা, নারায়নপুর গ্রামের আবু জুয়েল ২ বিঘা, রিংকু ২ বিঘা সহ এলাকার মাঠে বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষ হচ্ছে ড্রাগনের।

কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে রড সিমেন্টের তৈরি পিলার লাগে প্রায় ৯শ পিস, ৫ হাত বাই ৫ হাত এই পিলার পুতে তার সাথে ড্র্রাগনের কচ লাগানো হয়। এক একটি ভাল মানের কচ কিনতে ১৫ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি পিলারে একাধিক কচ লাগানো হয়। ফল দেয়া শুরু করলে প্রতিটি পিলার থেকে মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ কেজি ফল পাওয়া যায়। বাজারদর ভাল হলে পিলার প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি করা যায়। নিঃসন্দেহে একটি লাভজনক ফসল। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ড্রাগনের চাষ ব্যাপক বিস্তার সম্ভব বলে তারা মনে করছেন।

কেন এই ফলের নাম ড্রাগন? এমন প্রশ্নের উত্তরে জানা গেল ড্রাগন ফল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও মনোমুগ্ধকর। পাতাহীন এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকর ও লাল রঙের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রুপকথার ড্রাগনের পিঠের মত। এই রুপকথার ড্রাগনের মতো কিছুটা মিল থাকার জন্য একে ড্রাগন ফল বলে। ড্রাগন ফলের আদি স্থান হচ্ছে থাইল্যান্ড।

২০০৭ সালের দিকে থাইল্যান্ড হতে এই ফলটি বাংলাদেশে আসে। বর্তমানে এই ফলটি আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, মেক্সিকো, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, মালায়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফলে ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে। ডাগন ফল হার্টের রোগ, ব্লাড প্রেসার, ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়ক। অত্যন্ত সুস্বাদু এই ফলটি এখন শহর ও শহরতলীতে বসবাসকারী সকলের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছে।

জান‌তে চাই‌লে উপ‌জেলা কৃ‌ষি কর্মকর্তা সম‌রেন বিশ্বাস ব‌লেন, আ‌মি এ উপ‌জেলায় নতুন যোগদান ক‌রে‌ছি। আ‌মি ই‌তোম‌ধ্যে বি‌ভিন্ন গ্রা‌মের মাঠ ঘু‌রে দে‌খে‌ছি এ উপ‌জেলার মা‌টি খুবই চমৎকার এখা‌নে সকল প্রকার ফসল খুবই ভাল জ‌ন্মে। আ‌মি মা‌ঠের পর মাঠ ড্রাগন বাগান দে‌খে‌ছি। খুবই ভাল ফলন হ‌য়ে‌ছে। তি‌নি আ‌রো ব‌লেন ড্রাগন চা‌ষের ব‌্যাপা‌রে আমা‌দের প‌ক্ষে যত রকম সাহায‌্য স‌হ‌যো‌গিতা করা দরকার সবটাই আমরা কর‌বো।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়