শাহীন খন্দকার ও মিনহাজুল আবেদীন: [২] দেশে করোনাভাইরাস দিন দিন মহামারি আকার ধারণ করছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ভাইরাসটির শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে আরো ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ২০ হাজার ১৬ জন। এর আগে গতকাল ২৭ জুলাই দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছিলো।
[৩] বুধবার (২৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ১২ লাখ ১০ হাজার ৯৮২ জন।
[৪] গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৬ হাজার ১৫৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দেশের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৮৭৭ জন। যেখানে শনাক্তের হার ৩০ দশমিক ১২ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের মোট হার ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ।
[৫] বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার ৪৭০ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগির সংখ্যা ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮৪ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ১৪৯ জন ও মহিলা ৮৮ জন। যাদের মধ্যে বাসায় ১৩ জন ছাড়া বাকিরা হাসপাতালে মারা গেছেন। একই সময়ে বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ৭০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১ জন, খুলনা বিভাগে ৩৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ জন, সিলেট বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১৬ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ জন মারা গেছেন।
[৬] বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মারা যাওয়া ২৩৭ জনের মধ্যে ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১৫ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৪৫ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ৭৮ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৪ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩৪ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১১ জন ও ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৯ জন রয়েছে।
[৭] তথ্য মতে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও প্রায় দুই মাস ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেল্টা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে।
[৮] এদিকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ২১ জুলাই ঈদ উল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল থাকার পর গত শুক্রবার থেকে আবারও দুই সপ্তাহের লকডাউন শুরু হয়েছে। ঈদের ছুটিতে লাখ লাখ মানুষের শহর থেকে গ্রামে যাওয়া এবং তাদের ফিরে আসায় সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় কারিগরি কমিটি ঈদ ঘিরে বিধিনিষেধ শিথিলের সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছিলো।
[৯] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ঈদের পর করোনা রোগি শনাক্ত ও মৃত্যু আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হচ্ছে। বিশ্বে এখন দিনে সবচেয়ে বেশি রোগি শনাক্ত ও মৃত্যু হচ্ছে। তবে সে সব দেশের তালিকায় অষ্টম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
আপনার মতামত লিখুন :