নাঈমুল ইসলাম খান: [২] আব্দুন নূর তুষারের দুটো ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে আমার লেখার আগ্রহ। প্রথমটি বেশ কিছুকাল আগের, ঢাকা শহরের একজন সংসদ সদস্য আসলামুল হকের মৃত্যুর পর তার দেওয়া স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে। তবে এই প্রসঙ্গে পরে আসবো।
[৩] সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে আব্দুন নূর তুষারের স্ট্যাটাসটি যেহেতু সাম্প্রতিক তাই প্রথমে এই প্রসঙ্গেই লিখছি, একজন কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হিসেবে। ডা. আব্দুন নূর তুষার আমার ঘনিষ্ঠ এবং প্রিয়জন। তিনি ছিলেন তারকা বিতার্কিক। তার পান্ডিত্য এবং সৃজনশীলতা সর্বজনবিদিত।
[৪] তার এই স্ট্যাটাসে আমি প্রচন্ড রাগের প্রকাশ অনুভব করেছি। এই রাগের ফলেই সম্ভবত উক্ত স্ট্যাটাসটিতে তিনি তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারেননি। রাগের কারণেই সম্ভবত তথ্যানুসন্ধানেও ছিলো ঘাটতি।
[৫] ডা. তুষার প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের ক্রয়মূল্য বনাম প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন মানুষকে দিতে রাষ্ট্রকে সব মিলিয়ে কতো ব্যয় করতে হয়েছে, এই দুইয়ের পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেছেন। ফলে এই প্রসঙ্গে তার পুরো বক্তব্য ভুলে ভরা।
[৬] তুষার তীব্র রাগে লক্ষ্য করেননি যে ‘এন-৯৫ মাস্ক’ কেলেঙ্কারিতে সরকার, মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই সব মাস্কই সরবরাহকারীকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। বরং সরবরাহকারী এ জন্য জেলেও গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞাপনে এই সাধারণ তথ্যটি উপলব্ধি না করে মাস্ক নিয়ে অপ্রাসঙ্গিকভাবে পিপিই টেনে এনেছেন।
[৭] করোনার একজন রোগী গড়ে হাসপাতালে দশদিন থাকলে এর জন্য রাষ্ট্রের গড় ব্যয় জনপ্রতি বিশ হাজার টাকা। এখানেও ডা. তুষার খরচপাতি বলতে, ঔষধপত্রের ব্যয়কেই কেবল ধর্তব্যের মধ্যে নিয়েছেন, রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ব্যয় বেমালুম ভুলে গেছেন।
[৮] স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিজ্ঞাপনে বলেছে, দেশে অক্সিজেন ঘাটতি নেই। সাংবাদিক হিসেবে আমি যতটুকু জানি সমস্যা ছিলো সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যথাসময়ে অক্সিজেন সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায়। কারণ সারা দেশে করোনার ভয়াবহ বিস্তৃতি এবারই প্রথম। ডা. আব্দুন নূর তুষারের স্ট্যাটাসের পরে অদ্যাবধিও দেশে অক্সিজেনের সংকট নেই, বিতরণ ব্যবস্থাতেও এসেছে অনেকটা উন্নতি। রাগের কারণে আব্দুন নূর তুষার এই তথ্যগুলো বিবেচনায় নেননি।
[৯] তুষারের হয়তো মনে নেই বাংলাদেশে চিকিৎসকদের জন্য যখন পিপিই’র অভাবে তার ভাষায় ‘রেইনকোট’ দেওয়া হয়েছে, ঠিক একই পরিস্থিতিতে ইউরোপ আমেরিকায়, অতি অগ্রসর দেশে পিপিই’র অভাবে চিকিৎসাকর্মীরা গার্বেজ ব্যাগ ব্যবহার করে কাজ করেছেন। ‘রেইনকোট’ ছিলো সেই তুলনায় অনেক ভালো বিকল্প।
[১০] বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, এই ভয়ংকর মহামারিকালে বাংলাদেশের সীমিত সামর্থ্যরে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যে অপ্রত্যাশিত বিপজ্জনক চাপ সৃষ্টি হয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিভাগের কর্মকর্তাদের যেভাবে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে এবং সর্বোপরি ‘জরুরি অবস্থা’ মোকাবেলায় যে ক্ষিপ্রতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে, এমন সময় তাদের, অন্তত কিছু ভুল-ত্রুটি, ক্ষমাসুন্দর ভাবে দেখাটা সময়ের দাবি বলে আমার মনে হয়।
[১১] গণমাধ্যম এবং সুশীলসমাজ স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় অথবা সরকারেরর যেকোনো কাজে নির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রচার এবং প্রকাশ করবে সেটা অবশ্যই। কিন্তু বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্যানুসন্ধান না করে ভাসা ভাসা ধারণা এবং খন্ডিত বা অনির্ভরযোগ্য তথ্যভিত্তিক লেখালেখি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় নিবেদিত কর্মকর্তা এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভূমিকাকে ব্যঙ্গ তথা অশ্রদ্ধা করা হয়ে যায়।
[১২] আব্দুন নূর তুষারের এই স্ট্যাটাসটিতে আমার মন খারাপ হয়েছে, বিশেষ করে এই জন্য যে তার যোগ্যতার সাথে, তার মর্যাদার সাথে এই লেখাটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের এই দুরবস্থার সময় ডা. আব্দুন নূর তুষার আরও দায়িত্বশীল, ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।