শিরোনাম
◈ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্ব থেকে ডিসি-ইউএনওদের বাদ দিয়ে কারা থাকবে? ◈ ‘ভারতীয় সফটওয়্যার’ ইরানে হামলার নেপথ্যে, আতঙ্কে মুসলিম বিশ্ব ◈ সারজিস-হাসনাতকে শতবার কল করলেও রিসিভ করেন না: শহীদ জাহিদের মায়ের অভিযোগ ◈ ৭ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা, নদীবন্দরে সতর্কতা জারি, ঝড়ের শঙ্কা ◈ ফ্রা‌ন্সের লিও শহ‌রের কসাই থেকে গাজার কসাই: ইতিহাসে বারবার অপরাধীদের বাঁচিয়েছে আমেরিকা ◈ রিজার্ভে বড় সাফল্য: আইএমএফের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রবাসী আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি! ◈ আদানির বকেয়ার সব টাকা পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ◈ মাঠে ছড়িয়ে থাকা লেবু ও  ডিম দে‌খে ম্যাচ খেলতে আসা ‌ক্রিকেটাররা ভয়ে পালালেন ◈ ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে আপত্তি মোদি সরকারের! ◈ উনি ক্লাসে বাজে ঈঙ্গিতপূর্ণ কথা বলার পাশাপাশি বডি শেমিং করেন

প্রকাশিত : ০৭ জুলাই, ২০২১, ১১:৩৮ দুপুর
আপডেট : ০৭ জুলাই, ২০২১, ০২:৪০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১] যশোরে ভ্যানে, গাছের নিচে, ডাস্টবিনের সামনে চিকিৎসা নিচ্ছেন ক‌রোনা রোগি

র‌হিদুল খান: [২] যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বরবাঘ গ্রামের আব্দুল আজিজ (৭০)। বেশ কিছুদিন ধরে তার স্ত্রী রিনা বেগম শেখ ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৫ জুলাই রাত ১০ টায় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন ডাক্তার দেখাতে। জরুরি বিভাগের ডাক্তার তাকে দেখে মহিলা ইয়োলোজোনে প্রেরণ করেন। কিন্তু ওয়ার্ডের ভিতর বা বারান্দায় রোগীর চাপে কোনো জায়গা না থাকায় তার স্থান হয় ওয়ার্ডের সামনে রাখা একটি টি-টেবিলের উপর।

[৩] ৬ জুলাই বিকেল ৩টা পর্যন্ত ওয়ার্ডে তার কোনো জায়গা হয়নি। শুধু মর্জিনা নয়, তার মতো একাধিক রোগি কেউ ভ্যানের উপর, কেউ গাছের নিচে গুড়ার উপর, কেউ ওয়ার্ডের ডাস্টবিনের সামনে, কেউ বা ওয়ার্ডের বাইরে মাটিতে শুইয়ে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পরিস্থিতি এখন ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাহাকার বাড়ছে স্বজনদের মধ্যে।

[৪] যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

[৫] সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডাক্তার রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার ৮১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৫.৫৫ শতাংশ। এদিন নতুন করে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছয় জন করোনা রোগী ছিলেন। বাকি ছয় জনের উপসর্গ ছিল। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২৩৫ জন।

[৬] এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৭শ’ ৭৯জন, সুস্থ্য হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৯জন, মৃত্যু হয়েছে ১৮১ জন। এদিন যশোর সদর উপজেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৯ জনের। এছাড়া, কেশবপুরে ২৩ জন, ঝিকরগাছায় ৩৫ জন, অভয়নগরে ৮২ জন, মণিরামপুরে ১৯ জন, বাঘারপাড়ায় ১০ জন, শার্শায় ২৬ ও চৌগাছায় ২৫ জন করে রয়েছেন।

[৭] হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরুষ ও মহিলা ইয়োলোজেন রোগীর চাপ এতোটাই বেশী যে বেড না পাওয়ায় রোগীরা থাকছেন খোলা আকাশের নীচে। হঠাৎ করে করোনা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ভেতরে নয়, গাছের ডালে স্যালাইন বেঁধে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে রোগীকে। এদিকে, অক্সিজেন, স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

[৮] ওয়ার্ডের সেবিকারা বলছেন, এখানে যে পরিমান বেড রয়েছে রোগীর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি। মেঝেতেও যায়গা হচ্ছে না। যারা বাইরে অবস্থান করছেন, তাদেরকে সেবা দিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের বেডের সংখ্যা যদি বাড়ানো হয় তাহলে রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন।

[৯] বাঘারপাড়ার বরবাঘ গ্রামের আব্দুল আজিজ জানান, ৫ জুলাই রাত ১০টা থেকে তিনি মহিলা ইয়োলোজোনের সামনে খোলা আকাশের নিচে টি-টেবিলের উপর স্ত্রীকে নিয়ে বসে আছেন। বিকেল তিনটা পর্যন্ত তার ওয়ার্ডে কোনো যায়গা হয়নি। সারারাত মশার কামড়ে তিনি ও স্ত্রী অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। রাতে একাধিক বার ওয়ার্ডের সেবিকা ও ওয়ার্ড বয়দের কাছে আকুতি মিনতি করেও কোনো শয্যা পাননি। টানা ১৬ ঘন্টা এ বৃদ্ধ দম্পতি খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা নিয়েছেন।

[১০] সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার রাজু আহমেদ জানান, তার ষাটোর্ধ্ব চাচিকে নিয়ে ভ্যানযোগে সকাল সাড়ে ৯ টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। সেখানে ডাক্তার তাকে দেখে ইয়োলোজোনো প্রেরণ করেন। কিন্তু ইয়োলোজেনে কোনো যায়গা না থাকায় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রোগী ওয়ার্ডের সামনে ভ্যানের উপরে শুয়ে ছিলেন। ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অক্সিজেন ছাড়া কোনো চিকিৎসা পাননি। ১টা ১৫ মিনিটে ডাক্তার এসে রোগী দেখে গেছে। এমন একাধিক গুরুতর রোগী ওয়ার্ডে কোনো প্রকার চিকিৎসা পাননি ৩ ঘণ্টা।

যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের খালেদা পারভিন জানান, তার মায়ের শরীরে জ্বর থাকায় ডাক্তার জরুরি বিভাগ থেকে ইয়োলোজোনো প্রেরণ করেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো যায়গা না থাকায় ওয়ার্ডের বাইরে খোলো আকাশের নিচে ডাস্টবিনের সামনে মাকে রেখে চিকিৎসা করাতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝে মধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু কিছুই কারার না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
শহরের ঘোপ বেলতলা এলাকার মনিরা বেগম জানান, তিনি এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছেন। ডাক্তার দেখে তাকে ইয়োলোজোনে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু সেখানে কোনো সিট না থাকায় ওয়ার্ডের সীমানার বাইরে গাছের গুড়ির উপর শুয়ে ডালের সাথে স্যালাইন বেধে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

[১১] পুরুষ ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন নীলগজ্ঞ তাঁতীপাড়ার বাহাদুর মিয়া জানান, তিনি সকাল ৭টায় পুরুষ ইয়োলোজোনো ভর্তি হয়েছেন। এখনো পর্যন্ত তিনি ওয়ার্ডের গেটের সামনে পড়ে আছেন। বারান্দায় শুয়েও তার চিকিৎসা নেয়ার সৌভাগ্য হয়নি।

[১২] একাধিক রোগীর অভিযোগ, তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখেছেন করোনা ও উপসর্গ রোগীগের জন্য ১’শ ৩৪টি শয্যা বাড়ানো হয়েছে। একশ’ শয্যা বিভিন্ন ক্লিনিকে ও ৩৪ শয্যা হাসপাতালে। কিন্তু ৫ জুলাই সারাদিন এতো রোগীর চাপ থাকলেও কেউ ওই সকল বেডে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ পাননি।

[১৩] হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, অতিদ্রুত ওই সকল শয্যা চালু করা হবে। তবে, ঠিক কখন ওই সকল শয্যা চালু করা হবে তা পরিষ্কার করে বলতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

[১৪] হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আখতারুজ্জামান জানান, রেডজোনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। কিন্তু ইয়েলোজোনে হঠাৎ রোগীর চাপ বেড়েছে। পুরুষ পেইং বেডে ৩৪ ও হাসপাতালের টিকাদান কেন্দ্রে ২৪টি শয্যা বসানো হচ্ছে রোগীদের জন্য। ৭ জুলাই থেকে এখানে রোগীদের ভর্তি করা হবে। আশা করাছি ইয়েলো জোনের পরিবেশ এবার স্বাভাবিক হবে। সম্পাদনা: হ্যাপি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়